ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন জাতীয় প্রশাসন গঠনে রাজি তারা। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর)এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানায়, গত ১৮ আগস্ট গাজা পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ ও টেকনোক্র্যাটভিত্তিক প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মধ্যস্থতাকারীরা। হামাসের হাইকমান্ড সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। এখন আমরা ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করছি। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে হামাস আরও উল্লেখ করেছে যে, তারা একটি সমন্বিত চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত। চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবসান ঘটবে; সব দখলদার বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে; সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে যাতে গাজায় সব জরুরি ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করতে পারে এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
গোষ্ঠীটি আরও নিশ্চিত করে বলেছে, তারা গাজা উপত্যকার সব বিষয় তত্ত্বাবধানের জন্য টেকনোক্র্যাট বা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন জাতীয় প্রশাসন গঠনে সম্মতি দিয়েছে। এই টেকনোক্র্যাটরা তাৎক্ষণিকভাবে সব খাতের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের এ বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ‘প্রচার কৌশল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
নেতানিয়াহুর দফতর থেকে বলা হয়,ইসরায়েলের যুদ্ধকারীন মন্ত্রিসভার নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে শেষ হতে পারে। এই সভা যেসব শর্ত নির্ধারণ করেছে, সেগুলো হলো- সব জিম্মির মুক্তি, হামাসের অস্ত্র ভেঙে দেওয়া, গাজার সামরিকীকরণ বিলোপ, গাজায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ এবং একটি বিকল্প বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা, যা সন্ত্রাসবাদ শেখাবে না, সন্ত্রাসবাদ চালাবে না এবং ইসরায়েলকে হুমকি দেবে না।
তেলআবিবের হিসাবে,বর্তমানে গাজায় ৪৮ ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত। অপরদিকে ইসরায়েলি কারাগারে ১০ হাজার ৮০০-র বেশি ফিলিস্তিনি আটক রয়েছে। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারে ফিলিস্তিনিরা নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসা অবহেলার শিকার হচ্ছেন। অনেকে এসব কারণে মারাও গেছেন।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত বন্দি বিনিময় ও ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বিরত থাকে।
এরপর ২০ আগস্ট নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন যে তিনি গাজা সিটিতে পুনর্দখলের পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও আন্তর্জাতিক মহল সতর্ক করেছিল যে এতে পুরো উপত্যকা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে এবং ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটবে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ইতোমধ্যে ৬৩ হাজার ৭০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
গত নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।