ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। জ্বালানি ব্যবহারে অভ্যাসগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি শিল্প-কারখানায় নিয়মিত ‘এনার্জি অডিট’ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। সেই সঙ্গে খাতভিত্তিক গবেষণায় শিক্ষা খাতকে সম্পৃক্ত এবং ‘ইন্ডাস্ট্রি ম্যাপিং’-এর আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপের আলোচনা সভা সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশে জ্বালানি দক্ষতা নিয়ে এখনও কোনও সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই। বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যানগুলো বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেইসঙ্গে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বাড়ানো এবং জ্বালানির সংজ্ঞাগত বিভ্রান্তি দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
বিইপিআরসি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, জ্বালানি বিষয়ক সরকারি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তিতে যে গ্যাপ রয়েছে, তা কমাতে হবে। বেসরকারি খাতের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গবেষণায় এ খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, যাতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হয়।
নিউএইজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, বড় শিল্প-কারখানায় জ্বালানির সরবরাহ থাকলেও এসএমই খাত জ্বালানির অভাবে বিপর্যস্ত। নবায়নযোগ্য জ্বালানি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের দাবি জানান তিনি।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মো. রফিকুল আলম বলেন, সরকার এলএনজিতে ভর্তুকি দিচ্ছে, কিন্তু জনসচেতনতা বাড়িয়ে ৫-১৫ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় সম্ভব। নবায়নযোগ্য উৎস, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে জোর দেন তিনি।
বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, শিল্প খাতে ২৭ শতাংশ জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, যা ২০৫০ সালে ৪০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তাই এখনই দক্ষ ব্যবহারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক মো. ইমাম উদ্দিন শেখ জানান, দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ হচ্ছে ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি মেটাতে শিল্পাঞ্চলে কারখানা স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি।
বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসানুল আমিন জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে।
বিভিন্ন শিল্প সংগঠনের নেতারা সভায় অংশ নিয়ে জ্বালানির সংকট, উচ্চমূল্য, শুল্ক বাধা, এলএনজির নির্ভরতা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে, এতে দৈনিক ৪-৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে পারলে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব বলে জানান তিনি।
সানেমের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা উপস্থাপনায় শিল্পখাতে জ্বালানি দক্ষতার বর্তমান চিত্র, প্রযুক্তির ব্যবহার, স্ট্যান্ডার্ডাইজড পরিমাপের অভাব এবং অনিয়মিত সরবরাহের প্রভাব তুলে ধরা হয়।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন— জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ কমিশন, স্রেডা, পিডিবি, পেট্রোবাংলা, ডেসকো, ইডকল, বিসিএমএ, বিপিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, ফার্মা ও স্টিল খাতের নেতারা এবং এনার্জিপ্যাকের সিইও।
সভায় ডিসিসিআই-র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।