০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নীতি সুদহার কমাতে একমত ৩ উপদেষ্টা, ভিন্নমত গভর্নরের

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৪১ Time View

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত তিনজন উপদেষ্টা। তাদের মতে, উচ্চ নীতি সুদহার ব্যাংক খাতে ঋণের সুদ বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

 সোমবার (১০ নভেম্বর) আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার–সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এই মত দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেনও নীতি সুদহার কমানোর পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন।

তবে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “নীতি সুদহার কমানোর সময় এখনও আসেনি। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ কমায়, তাহলে বেসরকারি খাত আরও বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাবে।” তিনি সরকারি ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন।

নীতি সুদহার বা রেপো রেট হচ্ছে সেই হার, যে হারে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয়। এটি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রানীতি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এ হার ১০ শতাংশ, যার সঙ্গে যোগ হয়ে ব্যাংকের ঋণের সুদহার গড়ে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে—যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত

বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট নিয়েও আলোচনা হয়। জানা গেছে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর আগে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি যথাক্রমে ৪ দশমিক ৮ ও ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছে।

তবে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলনে আইএমএফের হিসাব সরকারের তুলনায় অনেক বেশি—৮ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এডিবি ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে।

বাজেটের আকার কমবে

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ২০ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বাজেটের মোট আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসবে ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায়।

একইসঙ্গে ২০২৬–২৭ অর্থবছরের বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বেশি হবে।

তিন উপদেষ্টার মতে, “বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে নীতি সুদহার যৌক্তিক মাত্রায় নামিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।” তবে গভর্নরের মতে, “মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সুদহার কমানো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।”

ট্যাগঃ

টিভিতে আজকের খেলা (১১ নভেম্বর, ২০২৫)

নীতি সুদহার কমাতে একমত ৩ উপদেষ্টা, ভিন্নমত গভর্নরের

সময়ঃ ১২:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত তিনজন উপদেষ্টা। তাদের মতে, উচ্চ নীতি সুদহার ব্যাংক খাতে ঋণের সুদ বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

 সোমবার (১০ নভেম্বর) আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার–সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এই মত দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেনও নীতি সুদহার কমানোর পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন।

তবে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “নীতি সুদহার কমানোর সময় এখনও আসেনি। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ কমায়, তাহলে বেসরকারি খাত আরও বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাবে।” তিনি সরকারি ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন।

নীতি সুদহার বা রেপো রেট হচ্ছে সেই হার, যে হারে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয়। এটি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রানীতি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এ হার ১০ শতাংশ, যার সঙ্গে যোগ হয়ে ব্যাংকের ঋণের সুদহার গড়ে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে—যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত

বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট নিয়েও আলোচনা হয়। জানা গেছে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর আগে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি যথাক্রমে ৪ দশমিক ৮ ও ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দিয়েছে।

তবে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলনে আইএমএফের হিসাব সরকারের তুলনায় অনেক বেশি—৮ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এডিবি ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে।

বাজেটের আকার কমবে

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ২০ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বাজেটের মোট আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসবে ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায়।

একইসঙ্গে ২০২৬–২৭ অর্থবছরের বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বেশি হবে।

তিন উপদেষ্টার মতে, “বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে নীতি সুদহার যৌক্তিক মাত্রায় নামিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।” তবে গভর্নরের মতে, “মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সুদহার কমানো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।”