০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহারাষ্ট্রে নারীদের প্রকল্পে সুবিধাভোগী ১২ হাজারের বেশি পুরুষ

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৩:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৫৫ Time View

ভারতের মহারাষ্ট্র সরকারের নারীদের কল্যাণে চালু করা প্রধান প্রকল্পে অন্তত ১২ হাজার ৪৩১ জন পুরুষ সুবিধা নিয়েছেন। তথ্য অধিকার আইনে (আরটিআই) পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, মাসে ১ হাজার ৫০০ রুপি করে এই অর্থ পুরুষদের অ্যাকাউন্টে গেছে টানা ১৩ মাস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।

নারী ও শিশু উন্নয়ন (ডব্লিউসিডি) দফতরের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, যাচাই শেষে এসব পুরুষকে সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনুপযুক্ত হিসেবে বাদ পড়েছেন আরও ৭৭ হাজার ৯৮০ নারী। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার রুপি অনিয়ম করে বিতরণ হয়েছে।

২০২৪ সালের জুনে এই প্রকল্প চালু করে তৎকালীন একনাথ শিন্ডে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা-বিজেপি মহাযুতি সরকার। ওই বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের আগে চালু হওয়ায় বিরোধীরা একে নির্বাচনি জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছিল। প্রকল্পের প্রচারে সরকার ১৯৯.৮১ কোটি রুপির বাজেট ঘোষণা করেছিল।

বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৪১ লাখ নারী এই প্রকল্পের আওতায় মাসে ১ হাজার ৫০০ রুপি পাচ্ছেন। এতে সরকারের মাসিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি রুপি।

আরেকটি আরটিআই জবাবে ডব্লিউসিডি জানায়, প্রায় ২ হাজার ৪০০ সরকারি কর্মচারীসহ বেশ কিছু পুরুষ বেআইনিভাবে এই সুবিধা নিয়েছেন। তবে এখনও কারও বিরুদ্ধে অর্থ ফেরতের কোনও প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এই অনিয়ম কেবল বরফের চূড়া। আমরা এখনও সব হিসাব মেলাতে পারিনি। যাচাই চলমান, ফলে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে।

তিনি জানান, যাচাই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ২৬ লাখ ৩৪ হাজার সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান জুন–জুলাই ২০২৫ থেকে স্থগিত করা হয়েছে।

আরটিআইয়ের এক উত্তরে ডব্লিউসিডি জানায়, পুরুষরা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ রুপি করে নিয়েছেন। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে তাদের অর্থ প্রদান বন্ধ করা হয়। এখনও অর্থ ফেরতের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় ৭৭ হাজার ৯৮০ নারীও প্রকল্পের শর্তপূরণে অযোগ্য বলে চিহ্নিত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধেও এখনও কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এক কর্মকর্তা জানান, যাচাই প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে অনেকেই মিথ্যা তথ্য, ভুল আয় ঘোষণা ও সম্পদের ভুল বিবরণ দিয়ে সুবিধা নিয়েছেন। একাধিক সরকারি প্রকল্প থেকে একই পরিবারে দুজন পর্যন্ত সুবিধা নিচ্ছিলেন। এমনকি বার্ষিক আয় আড়াই লাখ রুপির বেশি থাকা সরকারি কর্মচারীরাও তালিকায় ছিলেন।

সরকারি নথি অনুযায়ী, এই কর্মচারীরা কৃষি, পশুপালন, দুগ্ধ উন্নয়ন, সমাজকল্যাণ, তফসিলি জনগোষ্ঠী উন্নয়ন, আয়ুর্বেদ অধিদফতর ও জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দফতরে কর্মরত। কেবল জেলা পরিষদেই এই ধরনের কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৮৩ জন।

এক কর্মকর্তা বলেন, ডেটা রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়ায় আরও নাম উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে অনিয়ম ঠেকাতে সরকার রাজ্যজুড়ে ই-কেওয়াইসি যাচাই অভিযান শুরু করেছে।

গত ২৫ আগস্ট রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী আদিতি তাতকারে এক্স-এ মারাঠি ভাষায় পোস্ট করে লিখেছিলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের সব জেলা মিলিয়ে প্রায় ২৬ লাখ সুবিধাভোগী প্রকল্পের শর্ত পূরণ করছেন না।

তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের এই প্রাথমিক তথ্য এখন স্থানীয় প্রশাসনের হাতে পাঠানো হয়েছে যাচাইয়ের জন্য। যাচাই শেষে যারা অযোগ্য প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, যারা প্রকৃতভাবে যোগ্য, তাদের সুবিধা অব্যাহত থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নাভিস ও উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ও অজিত পাওয়ারের নির্দেশনায় বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

ট্যাগঃ

মহারাষ্ট্রে নারীদের প্রকল্পে সুবিধাভোগী ১২ হাজারের বেশি পুরুষ

সময়ঃ ১২:০৩:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের মহারাষ্ট্র সরকারের নারীদের কল্যাণে চালু করা প্রধান প্রকল্পে অন্তত ১২ হাজার ৪৩১ জন পুরুষ সুবিধা নিয়েছেন। তথ্য অধিকার আইনে (আরটিআই) পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, মাসে ১ হাজার ৫০০ রুপি করে এই অর্থ পুরুষদের অ্যাকাউন্টে গেছে টানা ১৩ মাস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।

নারী ও শিশু উন্নয়ন (ডব্লিউসিডি) দফতরের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, যাচাই শেষে এসব পুরুষকে সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনুপযুক্ত হিসেবে বাদ পড়েছেন আরও ৭৭ হাজার ৯৮০ নারী। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার রুপি অনিয়ম করে বিতরণ হয়েছে।

২০২৪ সালের জুনে এই প্রকল্প চালু করে তৎকালীন একনাথ শিন্ডে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা-বিজেপি মহাযুতি সরকার। ওই বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের আগে চালু হওয়ায় বিরোধীরা একে নির্বাচনি জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছিল। প্রকল্পের প্রচারে সরকার ১৯৯.৮১ কোটি রুপির বাজেট ঘোষণা করেছিল।

বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৪১ লাখ নারী এই প্রকল্পের আওতায় মাসে ১ হাজার ৫০০ রুপি পাচ্ছেন। এতে সরকারের মাসিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি রুপি।

আরেকটি আরটিআই জবাবে ডব্লিউসিডি জানায়, প্রায় ২ হাজার ৪০০ সরকারি কর্মচারীসহ বেশ কিছু পুরুষ বেআইনিভাবে এই সুবিধা নিয়েছেন। তবে এখনও কারও বিরুদ্ধে অর্থ ফেরতের কোনও প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এই অনিয়ম কেবল বরফের চূড়া। আমরা এখনও সব হিসাব মেলাতে পারিনি। যাচাই চলমান, ফলে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে।

তিনি জানান, যাচাই প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ২৬ লাখ ৩৪ হাজার সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান জুন–জুলাই ২০২৫ থেকে স্থগিত করা হয়েছে।

আরটিআইয়ের এক উত্তরে ডব্লিউসিডি জানায়, পুরুষরা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ রুপি করে নিয়েছেন। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে তাদের অর্থ প্রদান বন্ধ করা হয়। এখনও অর্থ ফেরতের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় ৭৭ হাজার ৯৮০ নারীও প্রকল্পের শর্তপূরণে অযোগ্য বলে চিহ্নিত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধেও এখনও কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এক কর্মকর্তা জানান, যাচাই প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে অনেকেই মিথ্যা তথ্য, ভুল আয় ঘোষণা ও সম্পদের ভুল বিবরণ দিয়ে সুবিধা নিয়েছেন। একাধিক সরকারি প্রকল্প থেকে একই পরিবারে দুজন পর্যন্ত সুবিধা নিচ্ছিলেন। এমনকি বার্ষিক আয় আড়াই লাখ রুপির বেশি থাকা সরকারি কর্মচারীরাও তালিকায় ছিলেন।

সরকারি নথি অনুযায়ী, এই কর্মচারীরা কৃষি, পশুপালন, দুগ্ধ উন্নয়ন, সমাজকল্যাণ, তফসিলি জনগোষ্ঠী উন্নয়ন, আয়ুর্বেদ অধিদফতর ও জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দফতরে কর্মরত। কেবল জেলা পরিষদেই এই ধরনের কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৮৩ জন।

এক কর্মকর্তা বলেন, ডেটা রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়ায় আরও নাম উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে অনিয়ম ঠেকাতে সরকার রাজ্যজুড়ে ই-কেওয়াইসি যাচাই অভিযান শুরু করেছে।

গত ২৫ আগস্ট রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী আদিতি তাতকারে এক্স-এ মারাঠি ভাষায় পোস্ট করে লিখেছিলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের সব জেলা মিলিয়ে প্রায় ২৬ লাখ সুবিধাভোগী প্রকল্পের শর্ত পূরণ করছেন না।

তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের এই প্রাথমিক তথ্য এখন স্থানীয় প্রশাসনের হাতে পাঠানো হয়েছে যাচাইয়ের জন্য। যাচাই শেষে যারা অযোগ্য প্রমাণিত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, যারা প্রকৃতভাবে যোগ্য, তাদের সুবিধা অব্যাহত থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নাভিস ও উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ও অজিত পাওয়ারের নির্দেশনায় বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।