টানা বৃষ্টিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে পানি বেড়েছে। পাশাপাশি তীব্র স্রোত ও ঘুর্ণাবর্তে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একদিনে প্রায় পাঁচ বিঘা কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে থাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এটি ভেঙে গেলে উপজেলার চার ইউনিয়নের লাখো মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়বেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই নদীভাঙন রোধে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারিয়াকান্দির কামালপুর ইউনিয়নের গোদাখালি এবং ইছামারা গ্রামে আবারও যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এখানে দু বছর আগে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৭০টি বসতবাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নদীভাঙন রোধে কাজ করা হয়। ফলে নদীভাঙন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই এর উজানে গোদাখালি গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেখানে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙন। এখানে কৃষকদের তিন ফসলি কৃষিজমি যমুনায় বিলীন হচ্ছে কয়েকদিন ধরেই। যেখানে ধান, পাট, মরিচসহ নানা ধরনের ফসল চাষ হয়।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় পাঁচ বিঘা কৃষিজমি যমুনায় বিলীন হয়েছে। নদীর যেখানে মূল ভাঙন রয়েছে সেখান থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের দূরত্ব মাত্র ২০০ মিটার। এলাকাবাসী মতে, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ যেকোনও সময় ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে যমুনার পানি ঢুকবে। যা বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলাকে প্লাবিত করবে। ফলে উপজেলার কামালপুর, ভেলাবাড়ী, চন্দনবাইশা ও কুতুবপুর ইউনিয়নের লাখো মানুষ বন্যা কবলিত হবে। এ ছাড়া এসব ইউনিয়নের কৃষকদের সদ্য বেড়ে ওঠা আমন ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দ্রুত ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি কাজ চান এলাকাবাসী।
ভাঙন হুমকিতে থাকা এলাকার মৃত মইর প্রামাণিকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০) জানান, তিনবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। আগে তার ৫০ বিঘা জমিতে নানা ধরনের ফসল চাষাবাদ হতো। ছিল পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান এবং গোয়াল ভরা গরু। যমুনা নদীর ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন বাঁধে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। প্রথমে তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন বয়সের ভারে সেটি ছেড়ে দিয়ে যমুনাপাড়েই কয়েকটি ছাগল লালন-পালন করে সংসার চালাচ্ছেন কোনোমতে।
তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বাঁধের বাড়িঘরও ভেঙে যাবে। এই শেষ সম্বলটুকু ভেঙে গেলে আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো? আমরা সরকারের কাছে ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (নকশা) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যমুনা নদীর ভাঙন রোধে ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থায়ী কাজ করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনার ভিত্তিতে স্টাডি চলছে। স্টাডির আলোকে প্রকল্প নকশা প্রণয়নের জন্য সারিয়াকান্দি উপজেলায় নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলাকে নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে বগুড়াবাসী রক্ষা পাবেন। তবে ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি কাজ চালু করা হয়েছে।’