সবুজ রঙের পাঞ্জাবি। প্রচণ্ড গরমেও উপরে একই রঙের কোটি। মাথায় তারা খোচিত ক্যাপ। হাতে দেশের পতাকা। মুখভর্তি সাদা দাড়ি। সারাক্ষণ ব্যস্ত পতাকা উড়াতে, গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করতে।
ক্রিকেট মাঠের যারা খোঁজ-খবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন এই আইকনিক সাপোর্টার কোন দেশের। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাওয়া গেল তাকে।
পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে মাঠে বসে সমর্থন করতে চৌধুরী আব্দুল জলিল ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে। যাকে ক্রিকেট বিশ্ব চেনে ‘চাচা ক্রিকেট’ নামে। শের-ই-বাংলায় দুই দলের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাকে পাওয়া গেল গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে।
৭৫ বছর বয়সী আব্দুল জলিল শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেটেরই নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের আইকনিক সাপোর্টার। ৫০০-রও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছেন আব্দুল জলিল। মিরপুরের গ্যালারিতে ভাষাগত সমস্যার কারণে খুব অল্প সময় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার। এজন্য শুরুতেই বলতে বাধ্য হন, ‘‘আপনি হয়তো উর্দুতে অভ্যস্ত নন। আমি সামান্যই ইংরেজি জানি। তবে একটু বাংলা জানি, আমি বাংলাদেশ ভালোবাসি।’’
বাংলাদেশে ২৭ বছর পর এসেছেন আব্দুল জলিল। ১৯৯৮ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচে ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলেছিল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। ওই ম্যাচের পর তার আর বাংলাদেশে আসা হয়নি। পুরোনো কিছু স্মৃতি তার মনে আছে এখনও, ‘‘তখন বায়তুল মোকাররাম মসজিদের পাশে একটি স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেছি। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচ হয়েছিল। ওখানেই একটি হোটেলে ছিলাম। পাশেই হকি স্টেডিয়াম ছিল।’’
পুরোনো এক বন্ধুর কথাও স্মরণ করলেন আব্দুল জলিল, ‘‘শাহ স্পোর্টস নামে একটি দোকান ছিল না। ওটার মালিক আমার বন্ধু।’’
১৯৬৯ সালে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে মাঠে বসে ক্রিকেট খেলা দেখা শুরু করেন তিনি। বয়স ছিল কেবল ১৯ বছর। মাঝে ১৯৭৩-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিশ বছর বাইরে ছিলেন। তখন আবুধাবির ওয়াটার পাম্প স্টেশনে অ্যাসিসটেন্ট ফোরম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৯৪ সালে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ দিয়ে মাঠে ফিরেন। শারজাহতে ঐতিহাসিক সিরিজে তার উপস্থিতি বাড়তি আগ্রহ তৈরি করেছিল সবার মধ্যে। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের আইকনিক ক্রিকেট ফ্যান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সফরে যেতে আর্থিক সহায়তাও দেয়। তবে পিসিবিতে রদবদল হওয়ার পর তাকে সাহায্য করা থেমে যায়।
তবে তাকে কেউ থামাতে পারেনি। ১৯৯৯ সালে চাচা ক্রিকেট তার শিয়ালকোটের বাড়ি বিক্রি করে ১৫ লাখ রূপি পায়। সেটা দিয়েই বিশ্বকাপের খেলা দেখতে যান।
অনেক বছর পর বাংলাদেশি মানুষের টানেই বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, ‘‘অনেক বছর পর বাংলাদেশে এসেছি। একমাস হলো বাংলাদেশ পাকিস্তানে গিয়ে খেলেছে। মনে হলো একবার গিয়ে ঘুরে আসা উচিৎ। এসে ভালো লাগছে। বেশ আন্তরিকতা দেখাচ্ছে।’’
তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর আব্দুল জলিলের পরিকল্পনা আছে কক্সবাজারে যাওয়ার। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে ভালো জ্ঞানও আছে তার, ‘‘শুনেছি ওখানের বিচ ভালো। ২৫ ও ২৬ তারিখ কক্সবাজার থাকবো। আমার বাংলাদেশি বন্ধু নিমন্ত্রণ জানিয়েছে।’’
শুধু পাকিস্তানের চিয়ারলিডার নয়, নিজেকে ক্রিকেটের বড় দূত হিসেবে মানেন আব্দুল জলিল, ‘‘আমি খ্যাতিমান চিয়ারলিডার। শুধু পাকিস্তানেরই নয়, আমি ক্রিকেট বিশ্বের সেরা চিয়ারলিডার। ৫৬ বছর হলো আমি পুরো বিশ্ব ঘুরে ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি।’’