‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর সমন্বিত খসড়ার ওপর মতামত জমা দিয়েছে বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল। অন্য দলগুলো হলো- এবি পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন হওয়ায় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি নিয়ে নতুন করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী ২৪ আগস্ট (রবিবার) এই বৈঠক হবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের তৃতীয় ও সর্বশেষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নে চারটি বিকল্প সামনে রাখা হয়েছে- গণভোট, সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অধ্যাদেশ জারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করে এবং তাদের অবস্থান গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। কিন্তু লিখিতভাবে মতামত জমা না দেওয়া পর্যন্ত তাকে চূড়ান্ত ধরা যায় না।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, শেষ পর্যন্ত দলগুলোর সহযোগিতায় সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
গত ১৬ আগস্ট ৩৫টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ এর খসড়া। প্রথমে মতামত দেওয়ার সময়সীমা ছিল ২০ আগস্ট, তবে পরে দুই দিন বাড়িয়ে আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সনদের ৮৪টি সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিন ধরনের আইনি পথ রয়েছে কিছু নির্বাহী আদেশে, কিছু আইন সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং কিছু সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। এ কারণেই দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপি বলছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয়। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি চাইছে, নির্বাচনের আগেই সনদ বাস্তবায়ন এবং সেই ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করা হোক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “খসড়ায় অসামঞ্জস্য আছে এবং কিছু বিষয় স্পষ্ট নয়। সংবিধানের ওপরে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল স্থান পেতে পারে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।”
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “দেশের ভবিষ্যতের জন্য সনদ গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া খসড়ায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যা হতাশাজনক।”
আগামী রবিবার কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, জুলাই সনদকে সর্বোচ্চ আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য এর বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
তিন অংশে সাজানো এই খসড়ায় রয়েছে প্রস্তাবনা, ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি সিদ্ধান্ত ও ৮টি অঙ্গীকার। এর মধ্যে ১৪টি সিদ্ধান্তে ‘ভিন্নমত’ (নোট অব ডিসেন্ট) সংযুক্ত করা হয়েছে।