ঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে এবং জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বিক্ষোভ হয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়; এই বিক্ষোভে ছাত্রঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়।
ইবি সংবাদদাতা জানান, নুরের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচারসহ তিন দাবিকে বিক্ষোভ করেছেন ইবির শিক্ষার্থীরা। অন্য দুই দাবি হলো-জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা ও জিএম কাদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং জাপাকে আগামী তিনটি নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে বের হওয়া মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘নুরের ওপর হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই, ‘জাতীয় পার্টির কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, ‘ভারতীয় ষড়যন্ত্র, রুখে দাও রুখে দাও,’ ‘জুলাই যোদ্ধা আহত কেন, জবাব চাই দিতে হবে,‘আপা গেছে যেই পথে, জাপা গেছে সেই পথে, ‘বিপ্লবীরা আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছেই চলবে’সহ নানা স্লোগান দেন দেন বিক্ষোভকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সাবেক সম্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। কারণ আজ সেনাবাহিনী নির্লজ্জভাবে নুরসহ তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে আহত করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে।”
শাবিপ্রবি সংবাদদাতা জানান, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর যৌথ বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদার ও অন্যরা।
বক্তারা বলেন, জুলাই-পরবর্তী সময়ে জাতীয় নেতাদের ওপর এ ধরনের হামলা ন্যক্কারজনক। জাতীয় পার্টিকে দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। নুরের ওপর হামলার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সমাবেশে ‘আপা গেছে যে পথে জাপা যাবে সে পথে, “নুরের ওপর হামলা করে, ইন্টারিম কি করে’, ‘আসিফ নজরুল কি করে নূরের ওপর হামলা করে, ‘জাহাঙ্গীর কি করে, নূরের ওপর হামলা করে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হামলার প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লঠিচার্জের শিকার হন নুরুল হক নুর। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক ভূমিকা রাখা নুরকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর সেখানে আসতে থাকেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অনেক দলের নেতাদের সেখানে দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের উদ্দেশে কথা বলেন এবং নুরের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা এই বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল। গণঅধিকারের দাবি, তাদের মিছিলের পেছন থেকে হামলা করেছে জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির পাল্টা অভিযোগ, তাদের প্রধান কার্যালয়ে হামলা হয়েছে ওই মিছিল থেকে।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ঢিল ছোড়াছুড়ির একপর্যায়ে কাকরাইল-বিজয়নগরে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হন জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকারের নেতাকর্মীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে মাঠে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উভয় পক্ষকে সরে যেতে নির্দেশ দিলেও গণঅধিকারের সভাপতি নুর সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় তার ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
রক্তাক্ত অবস্থায় নুরুল হক নুরকে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। নুরুল হকের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।