বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের চলমান কম্বাইন্ড ডিগ্রির আন্দোলনে রবিবার (৩১ আগস্ট) ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে সকাল ৯টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এসে জমা হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা প্রেস ব্রিফিংয়ে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।
ছয় দফা দাবির অন্যতম একটি- বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর, দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্থার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
শিক্ষার্থীদের বাকি দাবিগুলো হলো- অবৈধভাবে হল ভেকেন্টের নির্দেশনা দুপুর ২টার মধ্যে প্রত্যাহার করে আদেশ তুলে নিতে হবে; হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা (পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস) নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে; এই প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; গত ১ মাস ধরে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি অবিলম্বে প্রদান করতে হবে।
তবে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমি কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোন অন্যায় করিনি।”
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন। ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকেরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষীরা তালা ভেঙ্গে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।”
বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা বলছে- শিক্ষকরা বহিরাগতদের দিয়ে তাদের ওপর হামলা করেছে, এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে বলিনি ক্যাম্পাসে আসতে, আমরা কেন বলব? ছাত্রছাত্রীরা তো আমাদের ছেলে মেয়ের মতো।”
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভাঙচুরের বিষয়ে আমি অবশ্যই কমিটি করব।”