০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাকসু নির্বাচন: ‘উৎসবে’ হবে অবসান তেত্রিশ বছরের অপেক্ষার

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৪২ Time View

কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাকল্পে ৩৩ বছর ‘কেউ কথা রাখেনি’ ঠিকই; অপেক্ষার আবসানও আর হয়নি; তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন যুগ তিন বছরে এসে কথা রাখল।

সবুজে ঘেরা আকাশ খোলা এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের যে আয়োজন বত্রিশ বছর ‘বিনা দোষে’ অন্ধকারে ছিল, আজ তা আলোর মুখ দেখছে; উৎসবের আবহ সৃষ্টি করে কথা রাখছে প্রশাসন।

নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মুক্ত চিন্তা-মনন চর্চার ঐতিহ্যবাহী পিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকুস) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রেীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির নজিরবিহীন জয় নিশ্চিত করায় জাকসু নির্বাচনের দিকেও নজর রয়েছে সারা দেশের।   

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জাকসু নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার তথ্য জানিয়ে দিয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। 

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হল এবং ১০টি ছাত্রী হলের ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটগ্রহণ হবে বিরতিহীন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জাকসু) বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। একই বছর প্রথম জাকসু নির্বাচন হয়।

প্রতিষ্ঠার পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং জিএস হন রোকন উদ্দিন। 

এরপর ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। সবশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মাসুম হাসান তালুকদার লিটন এবং জিএস হন শামসুল তাবরিজ।

সেই বিরানব্বই সাল থেকে কত সহস্র শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগরে এসেছেন আর গেছেন; তার হয়তো তালিকাও রয়েছে; অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হবার পথটাই শুধু তারা দেখেছে কানাগলিতে শেষ হয়ে আছে। সেই গলি আবার দিশা পেয়েছে, আলো পেয়েছে শিক্ষার্থীদের দাবি। আজ তারা নিজেদের সেই সব নেতা বেছে নেবেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীবান্ধব রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

জাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ২১টি হলকে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। এসব  কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ২২৪টি বুথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৭ জন পোলিং অফিসার এবং কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

ভোটগ্রহণ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে গণনা করা হবে ভোট। গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা
তেত্রিশ বছর অপেক্ষার পর আয়োজিত জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে দেড় হাজার পুলিশ, সাত প্ল্যাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্ল্যাটুন আনসার। ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সদস্যদের ঘাড়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। ওই পত্রের বরাতে সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। বর্তমানে সেনাবাহিনী যেভাবে সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করছে, ঠিক সেভাবেই তারা জাকসু নির্বাচনে সহায়তাকারী হিসেবে থাকবে। তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকবে না।

দুটি বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট সাময়িক বন্ধ
জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশরারফ হোসেন হল গেট এবং প্রান্তিক গেট ছাড়া অন্য সব গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকেই যা কার্যকর হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বহাল থাকবে। 

সব দোকান বন্ধ
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ভাসমান দোকান, টারজান পয়েন্টের দোকান, পুরোনো পরিবহন-সংলগ্ন দোকান, নতুন কলা ভবন-সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের দোকান, প্রান্তিক গেটের উত্তর পাশের কাপড়ের মার্কেট ও গেটের সব দোকান এবং প্রধান গেট-সংলগ্ন সব দোকান ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। 

খোলা থাকবে হল ক্যান্টিন ও দোকান
সব হলের ভেতরে ক্যান্টিন ও দোকান খোলা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রাখতেও বলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গাড়ি চলাচলে বিধি-নিষেধ
১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা  থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেটের মতো জরুরি বিভাগ ছাড়া ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

তবে এই সময়ে শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাকার স্টিকার এবং নির্বাচন কমিশনের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। ১১ সেপ্টেম্বর সব স্টাফ বাস প্রান্তিক গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবশে করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছে।

বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ
ভোটগ্রহণ ঘিরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমানের সই করা নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষার্থী, অতিথিসহ যেকোনো ধরনের বহিরাগত ব্যক্তি অবস্থান করতে পারবেন না।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যা থেকে শিক্ষার্থীদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করাসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সব কিছুর মধ্যেই এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। 

কারণ বিভিন্ন প্যানেল থেকে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়া ডাকসু প্রার্থীদের এবারের প্রচারযজ্ঞে দেখা গেছে বৈচিত্র। শিক্ষার্থীরাও জাকসু ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন।

কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। 

ভোট দিতে পারবেন যারা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটা দিতে পারবেন। এমফিল, সান্ধ্যকালীন ও পার্ট টাইম কোর্সের শিক্ষার্থীরা জাকসুর ভোটার নন; কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। 

ভোটার সংখ্যা
আপত্তি নিষ্পত্তি ও সংশোধনের পর নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭২৮ জন ছাত্রী এবং ৬ হাজার ১১৫ জন ছাত্র। ছাত্রী ভোটার ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ছাত্র ভোটার ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিজ নিজ হলেই তাদের ভোটগ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ছাত্র ভোটারদের মধ্যে আল বেরুনী হলে ২১০ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৫২২ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯২ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৩৯৮ জন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন ভোটার রয়েছেন।

ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, ফজিলতুন্নেসা হলে ৭৯৮ জন, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন ভোটার রয়েছেন।

জাকসু নির্বাচনে লড়ছে ৮ প্যানেল
এবার জাকসু নির্বাচনে আটটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এগুলো হলো: গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, ছাত্রশিবিরের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্রদলের নিজস্ব প্যানেল, বামপন্থিদের তিনটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি প্যানেল।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল
জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে একজন নারী রেখে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে জাবি শাখা ছাত্রদল। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি মো. শেখ সাদী হাসান। জিএস পদে এবারের নির্বাচনের একমাত্র নারী প্রার্থী ও ১৩ নম্বর ছাত্রী হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ ছাড়া এজিএস (পুরুষ) পদে মো. সাজ্জাদুল ইসলাম এবং এজিএস (নারী) পদে আঞ্জুমান আরা ইকরাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্য’
নির্বাচনে বামপন্থিদের হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বিভাজন এর পেছনের কারণ বলে জানা গেছে।

ভিপি প্রার্থিহীন হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) একাংশের সমর্থনে গঠিত আংশিক প্যানেল। ২৫ সদস্য নিয়ে প্যানেল দিলেও পর্বরতীতে ছাত্রত্ব না থাকায় প্যানেল থেকে বাদ পড়েছেন ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য চন্দ্র রায়। 

ভিপি প্রার্থীহীন এই প্যানেলের নাম ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, যেখানে রয়েছেন সর্বোচ্চ ১১ জন নারী প্রার্থী, সাতজন আদিবাসী, ছয়জন সনাতন ধর্মাবলম্বী, তিনজন বৌদ্ধ ও দুজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রার্থী। এই প্যানেলে জিএস পদে রয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শরন এহসান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি।

‘সংশপ্তক পর্ষদ’ 
ছাত্র ইউনিয়ন (ইমন-তানজিম) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) নিয়ে গঠিত বামপন্থিদের আরেক অংশ শুধু পাঁচ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করেছে। ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে গঠিত এই প্যানেল ভিপি প্রার্থী ছাড়াই ঘোষণা করা হয়। এতে জিএস পদে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) জাহিদুল ইসলাম ইমন। অন্য প্রার্থীরা হলেন: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া জন্নাতুল ফেরদৌস, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে সৈয়দ তানজিম আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে তানজিল আহমেদ এবং সহ-সমাজসেবা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক (নারী) পদে সাদিয়া ইমরোজ ইলা।

‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’
এবারের জাকসু নির্বাচনে সবার আগে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে ইসলামী ছাত্রশিবির।
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের নাম ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। তাদের প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাবি শাখা শিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস পদে জাবি শাখা শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও নারী এজিএস পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই প্যানেলে স্থান পেয়েছেন ছয়জন নারী শিক্ষার্থী। রয়েছেন জাবিতে অধ্যয়নরত এক দম্পতি ও জুলাই আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী।
 
‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’
২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে নামে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখা। ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন বাগছাসের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল। জিএস পদে রয়েছেন সংগঠনটির জাবি শাখার সদস্য সচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে জিয়া উদ্দিন আয়ান।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) আংশিক প্যানেল
জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) তিন সদস্যের আরো একটি আংশিক প্যানেল জাকসু নির্বাচনে লড়াই করছে। যেখানে সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী হিসেবে আছেন ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার একাংশের সংগঠক মো. সজিব আহম্মদ জেনিচ। কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে রোকেয়া আমিন অনুসূয়া এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে মো. সুমন হোসেন রয়েছেন।

‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’
ক্রিয়াশীল সংগঠন ছাড়া এবারের জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে আরো দুটি প্যানেল লড়াই করছে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে গঠিত স্বতন্ত্রদের নিয়ে এই প্যানেলের ভিপি পদে লড়ছেন গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাকিল আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৌহিদুল ইসলাম নিবিড় ভূঁঞা। এই প্যানেলে নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়নি কোনো প্রার্থীকে।

‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে স্বতন্ত্রদের আরো একটি আংশিক প্যানেল ভোটে লড়ছে। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের মুখপাত্র মো. মাহফুজুল ইসলাম মেঘ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বাগছাসে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসা নাজমুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি এই প্যানেল।

ভিপি ও জিএস পদে আলোচনায় যারা
জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু, ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী, শিবির-সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ এবং বাগছাস সমর্থিত  আরিফজ্জামান উজ্জ্বল। তাদের মধ্য থেকেই এবারে ভিপি নির্বাচিত হবেন বলেই মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। 

জিএস পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী, ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম, বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের শরণ এহসান, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের জাহিদুল ইসলাম ইমন এবং স্বতন্ত্রদের নিয়ে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে গঠিত প্যানেলের মো. শাকিল আলী।

আলোচনায় ডোপ টেস্ট
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের ১৬৩ জন ও হল সংসদের ৪০৩ জন পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন। বাধ্যতামূলক করা হলেও ৫৬ প্রার্থী নমুনা দেননি।

ওএমআর ব্যালটে ভোট, দিতে হবে টিক চিহ্ন
জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ওএমআর ব্যালটে। টিক চিহ্ন (✓) দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত ভিডিও নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

আদালতে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল
জাহাঙ্গীরনগর শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে আদালত।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাই কোর্টে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রিট করেন অমর্ত্য। তবে আদালতে শুনানি শেষে প্রার্থিতা ফিরিয়ে পাননি তিনি। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল হয় চেম্বার জজ আদালতে।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা মোতাবেক অমত্য রায়ের ছাত্রত্ব না থাকায় তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ
অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের এক দিন আগে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাতভর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন-সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা সমস্যার সমাধান চেয়ে তাদের আটকে রাখেন।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সাফ বলে দেন, “এটা আদালতের রায়। চাইলেই তো আমরা পরিবর্তন করে ফেলতে পারি না। তবে আমি চাই সমস্যার সমাধান হোক। কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চাই।”

প্রার্থী কমেছে দুজন
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ১৭৯ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তবে ভিপি পদে একজনের প্রার্থিতা বাতিল ও জিএস পদে একজন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই হিসাবে জাকসুতে মোট ১৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেলে জায়গা না পেয়ে প্যানেল ঘোষণার দিন বিদ্রোহ করে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। তবে মঙ্গলবার তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

ভোটের আগের রাতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তিন ঘটনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তিনটি অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তিনটি ঘটনারই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বুধবার রাত ১২টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বসে থাকতে দেখা যায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিবকে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তার আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে বিএনপিপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ মল্লিক ও ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভির বিরুদ্ধে। আচরণবিধি ভঙ্গ করে তারা জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিনেট ভবনের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেনকে দেখা যায়। ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার সময় পাশেপাশে তারা হাঁটছিলেন। এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে তা ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ট্যাগঃ

টিভিতে আজকের খেলা (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)

জাকসু নির্বাচন: ‘উৎসবে’ হবে অবসান তেত্রিশ বছরের অপেক্ষার

সময়ঃ ১২:০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাকল্পে ৩৩ বছর ‘কেউ কথা রাখেনি’ ঠিকই; অপেক্ষার আবসানও আর হয়নি; তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন যুগ তিন বছরে এসে কথা রাখল।

সবুজে ঘেরা আকাশ খোলা এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের যে আয়োজন বত্রিশ বছর ‘বিনা দোষে’ অন্ধকারে ছিল, আজ তা আলোর মুখ দেখছে; উৎসবের আবহ সৃষ্টি করে কথা রাখছে প্রশাসন।

নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মুক্ত চিন্তা-মনন চর্চার ঐতিহ্যবাহী পিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকুস) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রেীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির নজিরবিহীন জয় নিশ্চিত করায় জাকসু নির্বাচনের দিকেও নজর রয়েছে সারা দেশের।   

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জাকসু নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার তথ্য জানিয়ে দিয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। 

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হল এবং ১০টি ছাত্রী হলের ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটগ্রহণ হবে বিরতিহীন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জাকসু) বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। একই বছর প্রথম জাকসু নির্বাচন হয়।

প্রতিষ্ঠার পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং জিএস হন রোকন উদ্দিন। 

এরপর ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। সবশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মাসুম হাসান তালুকদার লিটন এবং জিএস হন শামসুল তাবরিজ।

সেই বিরানব্বই সাল থেকে কত সহস্র শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগরে এসেছেন আর গেছেন; তার হয়তো তালিকাও রয়েছে; অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হবার পথটাই শুধু তারা দেখেছে কানাগলিতে শেষ হয়ে আছে। সেই গলি আবার দিশা পেয়েছে, আলো পেয়েছে শিক্ষার্থীদের দাবি। আজ তারা নিজেদের সেই সব নেতা বেছে নেবেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীবান্ধব রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

জাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ২১টি হলকে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। এসব  কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ২২৪টি বুথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৭ জন পোলিং অফিসার এবং কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

ভোটগ্রহণ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে গণনা করা হবে ভোট। গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা
তেত্রিশ বছর অপেক্ষার পর আয়োজিত জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে দেড় হাজার পুলিশ, সাত প্ল্যাটুন বিজিবি ও পাঁচ প্ল্যাটুন আনসার। ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সদস্যদের ঘাড়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। ওই পত্রের বরাতে সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। বর্তমানে সেনাবাহিনী যেভাবে সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করছে, ঠিক সেভাবেই তারা জাকসু নির্বাচনে সহায়তাকারী হিসেবে থাকবে। তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকবে না।

দুটি বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট সাময়িক বন্ধ
জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশরারফ হোসেন হল গেট এবং প্রান্তিক গেট ছাড়া অন্য সব গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকেই যা কার্যকর হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বহাল থাকবে। 

সব দোকান বন্ধ
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ভাসমান দোকান, টারজান পয়েন্টের দোকান, পুরোনো পরিবহন-সংলগ্ন দোকান, নতুন কলা ভবন-সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের দোকান, প্রান্তিক গেটের উত্তর পাশের কাপড়ের মার্কেট ও গেটের সব দোকান এবং প্রধান গেট-সংলগ্ন সব দোকান ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। 

খোলা থাকবে হল ক্যান্টিন ও দোকান
সব হলের ভেতরে ক্যান্টিন ও দোকান খোলা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রাখতেও বলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গাড়ি চলাচলে বিধি-নিষেধ
১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা  থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেটের মতো জরুরি বিভাগ ছাড়া ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

তবে এই সময়ে শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাকার স্টিকার এবং নির্বাচন কমিশনের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। ১১ সেপ্টেম্বর সব স্টাফ বাস প্রান্তিক গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবশে করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছে।

বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ
ভোটগ্রহণ ঘিরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমানের সই করা নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে সাবেক শিক্ষার্থী, অতিথিসহ যেকোনো ধরনের বহিরাগত ব্যক্তি অবস্থান করতে পারবেন না।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যা থেকে শিক্ষার্থীদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করাসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সব কিছুর মধ্যেই এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। 

কারণ বিভিন্ন প্যানেল থেকে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নেওয়া ডাকসু প্রার্থীদের এবারের প্রচারযজ্ঞে দেখা গেছে বৈচিত্র। শিক্ষার্থীরাও জাকসু ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন।

কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। 

ভোট দিতে পারবেন যারা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটা দিতে পারবেন। এমফিল, সান্ধ্যকালীন ও পার্ট টাইম কোর্সের শিক্ষার্থীরা জাকসুর ভোটার নন; কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। 

ভোটার সংখ্যা
আপত্তি নিষ্পত্তি ও সংশোধনের পর নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭২৮ জন ছাত্রী এবং ৬ হাজার ১১৫ জন ছাত্র। ছাত্রী ভোটার ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ছাত্র ভোটার ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নিজ নিজ হলেই তাদের ভোটগ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ছাত্র ভোটারদের মধ্যে আল বেরুনী হলে ২১০ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৫২২ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯২ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৩৯৮ জন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন ভোটার রয়েছেন।

ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, ফজিলতুন্নেসা হলে ৭৯৮ জন, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন ভোটার রয়েছেন।

জাকসু নির্বাচনে লড়ছে ৮ প্যানেল
এবার জাকসু নির্বাচনে আটটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এগুলো হলো: গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, ছাত্রশিবিরের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্রদলের নিজস্ব প্যানেল, বামপন্থিদের তিনটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি প্যানেল।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল
জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে একজন নারী রেখে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে জাবি শাখা ছাত্রদল। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি মো. শেখ সাদী হাসান। জিএস পদে এবারের নির্বাচনের একমাত্র নারী প্রার্থী ও ১৩ নম্বর ছাত্রী হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ ছাড়া এজিএস (পুরুষ) পদে মো. সাজ্জাদুল ইসলাম এবং এজিএস (নারী) পদে আঞ্জুমান আরা ইকরাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্য’
নির্বাচনে বামপন্থিদের হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বিভাজন এর পেছনের কারণ বলে জানা গেছে।

ভিপি প্রার্থিহীন হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) একাংশের সমর্থনে গঠিত আংশিক প্যানেল। ২৫ সদস্য নিয়ে প্যানেল দিলেও পর্বরতীতে ছাত্রত্ব না থাকায় প্যানেল থেকে বাদ পড়েছেন ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য চন্দ্র রায়। 

ভিপি প্রার্থীহীন এই প্যানেলের নাম ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, যেখানে রয়েছেন সর্বোচ্চ ১১ জন নারী প্রার্থী, সাতজন আদিবাসী, ছয়জন সনাতন ধর্মাবলম্বী, তিনজন বৌদ্ধ ও দুজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রার্থী। এই প্যানেলে জিএস পদে রয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শরন এহসান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি।

‘সংশপ্তক পর্ষদ’ 
ছাত্র ইউনিয়ন (ইমন-তানজিম) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) নিয়ে গঠিত বামপন্থিদের আরেক অংশ শুধু পাঁচ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করেছে। ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে গঠিত এই প্যানেল ভিপি প্রার্থী ছাড়াই ঘোষণা করা হয়। এতে জিএস পদে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) জাহিদুল ইসলাম ইমন। অন্য প্রার্থীরা হলেন: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া জন্নাতুল ফেরদৌস, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে সৈয়দ তানজিম আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে তানজিল আহমেদ এবং সহ-সমাজসেবা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক (নারী) পদে সাদিয়া ইমরোজ ইলা।

‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’
এবারের জাকসু নির্বাচনে সবার আগে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে ইসলামী ছাত্রশিবির।
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের নাম ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। তাদের প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাবি শাখা শিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস পদে জাবি শাখা শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও নারী এজিএস পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই প্যানেলে স্থান পেয়েছেন ছয়জন নারী শিক্ষার্থী। রয়েছেন জাবিতে অধ্যয়নরত এক দম্পতি ও জুলাই আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী।
 
‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’
২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে নামে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখা। ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন বাগছাসের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল। জিএস পদে রয়েছেন সংগঠনটির জাবি শাখার সদস্য সচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে জিয়া উদ্দিন আয়ান।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) আংশিক প্যানেল
জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) তিন সদস্যের আরো একটি আংশিক প্যানেল জাকসু নির্বাচনে লড়াই করছে। যেখানে সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী হিসেবে আছেন ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার একাংশের সংগঠক মো. সজিব আহম্মদ জেনিচ। কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে রোকেয়া আমিন অনুসূয়া এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে মো. সুমন হোসেন রয়েছেন।

‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’
ক্রিয়াশীল সংগঠন ছাড়া এবারের জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে আরো দুটি প্যানেল লড়াই করছে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে গঠিত স্বতন্ত্রদের নিয়ে এই প্যানেলের ভিপি পদে লড়ছেন গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাকিল আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৌহিদুল ইসলাম নিবিড় ভূঁঞা। এই প্যানেলে নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়নি কোনো প্রার্থীকে।

‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে স্বতন্ত্রদের আরো একটি আংশিক প্যানেল ভোটে লড়ছে। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের মুখপাত্র মো. মাহফুজুল ইসলাম মেঘ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বাগছাসে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসা নাজমুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি এই প্যানেল।

ভিপি ও জিএস পদে আলোচনায় যারা
জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু, ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী, শিবির-সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ এবং বাগছাস সমর্থিত  আরিফজ্জামান উজ্জ্বল। তাদের মধ্য থেকেই এবারে ভিপি নির্বাচিত হবেন বলেই মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। 

জিএস পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী, ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম, বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের শরণ এহসান, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের জাহিদুল ইসলাম ইমন এবং স্বতন্ত্রদের নিয়ে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে গঠিত প্যানেলের মো. শাকিল আলী।

আলোচনায় ডোপ টেস্ট
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের ১৬৩ জন ও হল সংসদের ৪০৩ জন পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন। বাধ্যতামূলক করা হলেও ৫৬ প্রার্থী নমুনা দেননি।

ওএমআর ব্যালটে ভোট, দিতে হবে টিক চিহ্ন
জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ওএমআর ব্যালটে। টিক চিহ্ন (✓) দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত ভিডিও নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

আদালতে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল
জাহাঙ্গীরনগর শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে আদালত।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাই কোর্টে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রিট করেন অমর্ত্য। তবে আদালতে শুনানি শেষে প্রার্থিতা ফিরিয়ে পাননি তিনি। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল হয় চেম্বার জজ আদালতে।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা মোতাবেক অমত্য রায়ের ছাত্রত্ব না থাকায় তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ
অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের এক দিন আগে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাতভর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন-সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা সমস্যার সমাধান চেয়ে তাদের আটকে রাখেন।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সাফ বলে দেন, “এটা আদালতের রায়। চাইলেই তো আমরা পরিবর্তন করে ফেলতে পারি না। তবে আমি চাই সমস্যার সমাধান হোক। কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চাই।”

প্রার্থী কমেছে দুজন
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ১৭৯ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। তবে ভিপি পদে একজনের প্রার্থিতা বাতিল ও জিএস পদে একজন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেই হিসাবে জাকসুতে মোট ১৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদলের প্যানেলে জায়গা না পেয়ে প্যানেল ঘোষণার দিন বিদ্রোহ করে জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। তবে মঙ্গলবার তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

ভোটের আগের রাতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তিন ঘটনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তিনটি অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তিনটি ঘটনারই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বুধবার রাত ১২টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বসে থাকতে দেখা যায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিবকে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তার আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে বিএনপিপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ মল্লিক ও ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভির বিরুদ্ধে। আচরণবিধি ভঙ্গ করে তারা জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিনেট ভবনের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেনকে দেখা যায়। ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার সময় পাশেপাশে তারা হাঁটছিলেন। এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে তা ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।