০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্কির স্বামী কেন বিমান ছিনতাই করে ভারতে নামিয়েছিলেন?

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৯:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৪২ Time View

কাঠমান্ডু তার অস্থির রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শপথ নিলেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদী ছিলেন নেপালের রাজতন্ত্র বিলোপ আন্দোলনের একজন তরুণ নেতা। একটি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার নাম।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল, নেপালের জেন-জি আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিকে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের নজিরবিহীন বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর ঘটনাপ্রবাহের ফল হিসেবে বিদ্যমান পক্ষগুলোর মধ্যে কার্কিকে নিয়ে সমঝোতা হয়।

কার্কি বৃহস্পতিবার রাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এখন কার্কি ও তার পরিবার এবং তার উড়াই-উৎরাইয়ের জীবন নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ বাড়ছে। কার্কির ছোটবেলা থেকে তার স্বামীর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং পরবর্তী কর্মজীবন থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার ঘটনাপ্রবাহে সংক্ষেপে চোখ বুলিয়ে আসা যাক। 

প্রধান বিচারপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী
৭৩ বছর বয়সি সুশীলা কার্কি পেশাগতভাবে কোনো রাজনীতিক নন। তিনি মূলত পরিচিত ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য। বিচারপতি হিসেবে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যা তাকে যেমন প্রশংসিত করেছে, তেমনি তার জন্য শত্রুও তৈরি করেছে।

একজন সৎ বিচারপতি হিসেবে কার্কির খ্যাতি তাকে এমন এক সময়ে রাজনৈতিক আলোর বৃত্তে নিয়ে এসেছে যখন দুর্নীতি ও শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে কাঁপছে নেপাল। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে আসছিল।

কার্কির নিয়োগকে তুলনা করা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে, যিনি গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়।

শৈশব ও শিক্ষা
১৯৫২ সালে নেপালের এক কৃষক পরিবারের জন্ম নেন সুশীলা কার্কি। এই পরিবারের সাত সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার পরিবার ১৯৫৯ সালের নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালার ঘনিষ্ঠ ছিল।

১৯৭২ সালে তিনি মহেন্দ্র মোরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ সম্পন্ন করেন, এরপর ১৯৭৫ সালে ভারতের বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন বছর পর ১৯৭৮ সালে তিনি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮৫ সালে তিনি ধরনস্থ মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এর পাশাপাশি ১৯৭৯ সাল থেকে বিরাটনগরে আইন চর্চা শুরু করেন।

বিচার বিভাগীয় ক্যারিয়ার ও বিতর্ক
২০০৯ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে তার বিচারিক জীবন শুরু হয়। এক বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন, আর ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রধান বিচারপতির পদে উন্নীত হন।

২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর আইনপ্রণেতারা তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন। অভিযোগ ছিল, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানকে বরখাস্ত করার রায়ে পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন। এর ফলে তাকে অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তবে উদ্যোগটি ব্যুমেরাং হয়ে যায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট নিজেই হস্তক্ষেপ করে প্রক্রিয়া স্থগিত করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিশংসন প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয় এবং কার্কি পুনরায় পদে বহাল হন। তবে এর কিছুদিন পরই ২০১৭ সালের জুনে তিনি অবসরে যান।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মামলার রায় দেন, যার মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়া প্রকাশ প্রসাদ গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা অন্যতম।

ভারতের সঙ্গে সংযোগ
ভারতের ধর্মীয় শহর বারাণসীর বিএইচইউ-তে পড়াশোনার সময় তিনি দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর সঙ্গে পরিচিত হন। সুবেদী তার গৃহশিক্ষকও ছিলেন। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।  সুবেদী তখন নেপালি কংগ্রেসের যুবনেতা ছিলেন এবং ১৯৭৩ সালের ১০ জুন নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছিনতাইয়ের নাটকীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিমানটিতে নেপালের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৪০ লাখ রুপি (তৎকালীন প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার) বহন করা হচ্ছিল। সেই বিমানটিকে ভারতের বিহারের পুরনিয়া জেলার ফোর্বসগঞ্জে নামতে বাধ্য করা হয়। সেই বিমানে হিন্দি সিনেমার অভিনেত্রী মালা সিনহাও উপস্থিত ছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ছিনতাইকারীরা পাইলটকে বন্দুক দেখিয়ে বিমানটি ভারতে নামাতে বাধ্য করেন। কোনো যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হননি। নগদ অর্থের তিনটি বাক্স নামানোর পর বিমানটিকে আবার গন্তব্যে যেতে দেওয়া হয়।

ওই বিপুল অর্থ ভারতের সীমান্তে অপেক্ষমাণ গিরিজা প্রসাদ কৈরালার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে এই অর্থ নেপালি কংগ্রেসের রাজতন্ত্রবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের অস্ত্র কেনায় ব্যবহার করা হয়।

এক বছরের মধ্যে সুবেদীসহ অন্যরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং দুই বছরের কারাদণ্ড শেষে ১৯৮০ সালের গণভোটের আগেই নেপালে ফিরে যান।

যে আন্দোলন কার্কিকে ক্ষমতায় নিয়ে এল
চলতি সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হন। এসব বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ওলি সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে, যা জনমনে ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টা হিসেবে ধরা হয়েছিল। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় কিন্তু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ওলি পদত্যাগ করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২১ জন বিক্ষোভকারী, ৯ জন বন্দি, ৩ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৮ জন অন্যান্য সাধারণ মানুষ ছিলেন। কাঠমান্ডুর হাসপাতালগুলো থেকে স্বজনরা এখন তাদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন।

শুক্রবার কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাট থেকে সেনা সরে যেতে শুরু করেছে। পুলিশের হাতে এখন আর রাইফেল নেই, কেবল লাঠি রয়েছে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান করছে।

ট্যাগঃ

নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্কির স্বামী কেন বিমান ছিনতাই করে ভারতে নামিয়েছিলেন?

সময়ঃ ১২:০৯:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাঠমান্ডু তার অস্থির রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শপথ নিলেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তার স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদী ছিলেন নেপালের রাজতন্ত্র বিলোপ আন্দোলনের একজন তরুণ নেতা। একটি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার নাম।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল, নেপালের জেন-জি আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিকে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের নজিরবিহীন বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর ঘটনাপ্রবাহের ফল হিসেবে বিদ্যমান পক্ষগুলোর মধ্যে কার্কিকে নিয়ে সমঝোতা হয়।

কার্কি বৃহস্পতিবার রাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এখন কার্কি ও তার পরিবার এবং তার উড়াই-উৎরাইয়ের জীবন নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ বাড়ছে। কার্কির ছোটবেলা থেকে তার স্বামীর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং পরবর্তী কর্মজীবন থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার ঘটনাপ্রবাহে সংক্ষেপে চোখ বুলিয়ে আসা যাক। 

প্রধান বিচারপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী
৭৩ বছর বয়সি সুশীলা কার্কি পেশাগতভাবে কোনো রাজনীতিক নন। তিনি মূলত পরিচিত ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য। বিচারপতি হিসেবে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যা তাকে যেমন প্রশংসিত করেছে, তেমনি তার জন্য শত্রুও তৈরি করেছে।

একজন সৎ বিচারপতি হিসেবে কার্কির খ্যাতি তাকে এমন এক সময়ে রাজনৈতিক আলোর বৃত্তে নিয়ে এসেছে যখন দুর্নীতি ও শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে কাঁপছে নেপাল। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে আসছিল।

কার্কির নিয়োগকে তুলনা করা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে, যিনি গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়।

শৈশব ও শিক্ষা
১৯৫২ সালে নেপালের এক কৃষক পরিবারের জন্ম নেন সুশীলা কার্কি। এই পরিবারের সাত সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার পরিবার ১৯৫৯ সালের নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালার ঘনিষ্ঠ ছিল।

১৯৭২ সালে তিনি মহেন্দ্র মোরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ সম্পন্ন করেন, এরপর ১৯৭৫ সালে ভারতের বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন বছর পর ১৯৭৮ সালে তিনি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮৫ সালে তিনি ধরনস্থ মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এর পাশাপাশি ১৯৭৯ সাল থেকে বিরাটনগরে আইন চর্চা শুরু করেন।

বিচার বিভাগীয় ক্যারিয়ার ও বিতর্ক
২০০৯ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে তার বিচারিক জীবন শুরু হয়। এক বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হন, আর ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রধান বিচারপতির পদে উন্নীত হন।

২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর আইনপ্রণেতারা তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন। অভিযোগ ছিল, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানকে বরখাস্ত করার রায়ে পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন। এর ফলে তাকে অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তবে উদ্যোগটি ব্যুমেরাং হয়ে যায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট নিজেই হস্তক্ষেপ করে প্রক্রিয়া স্থগিত করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিশংসন প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয় এবং কার্কি পুনরায় পদে বহাল হন। তবে এর কিছুদিন পরই ২০১৭ সালের জুনে তিনি অবসরে যান।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মামলার রায় দেন, যার মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়া প্রকাশ প্রসাদ গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা অন্যতম।

ভারতের সঙ্গে সংযোগ
ভারতের ধর্মীয় শহর বারাণসীর বিএইচইউ-তে পড়াশোনার সময় তিনি দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর সঙ্গে পরিচিত হন। সুবেদী তার গৃহশিক্ষকও ছিলেন। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।  সুবেদী তখন নেপালি কংগ্রেসের যুবনেতা ছিলেন এবং ১৯৭৩ সালের ১০ জুন নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছিনতাইয়ের নাটকীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিমানটিতে নেপালের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৪০ লাখ রুপি (তৎকালীন প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলার) বহন করা হচ্ছিল। সেই বিমানটিকে ভারতের বিহারের পুরনিয়া জেলার ফোর্বসগঞ্জে নামতে বাধ্য করা হয়। সেই বিমানে হিন্দি সিনেমার অভিনেত্রী মালা সিনহাও উপস্থিত ছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ছিনতাইকারীরা পাইলটকে বন্দুক দেখিয়ে বিমানটি ভারতে নামাতে বাধ্য করেন। কোনো যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হননি। নগদ অর্থের তিনটি বাক্স নামানোর পর বিমানটিকে আবার গন্তব্যে যেতে দেওয়া হয়।

ওই বিপুল অর্থ ভারতের সীমান্তে অপেক্ষমাণ গিরিজা প্রসাদ কৈরালার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে এই অর্থ নেপালি কংগ্রেসের রাজতন্ত্রবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের অস্ত্র কেনায় ব্যবহার করা হয়।

এক বছরের মধ্যে সুবেদীসহ অন্যরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং দুই বছরের কারাদণ্ড শেষে ১৯৮০ সালের গণভোটের আগেই নেপালে ফিরে যান।

যে আন্দোলন কার্কিকে ক্ষমতায় নিয়ে এল
চলতি সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হন। এসব বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ওলি সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে, যা জনমনে ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টা হিসেবে ধরা হয়েছিল। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় কিন্তু আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ওলি পদত্যাগ করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২১ জন বিক্ষোভকারী, ৯ জন বন্দি, ৩ জন পুলিশ সদস্য এবং ১৮ জন অন্যান্য সাধারণ মানুষ ছিলেন। কাঠমান্ডুর হাসপাতালগুলো থেকে স্বজনরা এখন তাদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন।

শুক্রবার কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাট থেকে সেনা সরে যেতে শুরু করেছে। পুলিশের হাতে এখন আর রাইফেল নেই, কেবল লাঠি রয়েছে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান করছে।