০৮:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রমিক শক্তির নেতা মোতালেবকে গুলির নেপথ্যে কী, জানাল পুলিশ

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৪৩ Time View

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধান মো. মোতালেব শিকদারকে গুলি করার নেপথ্যে নারী এবং মাদক-সংক্রান্ত বিরোধের তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে নেশাজাতীয় নানা সামগ্রী। ফলে, ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরেই তাকে গুলি করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। 

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মসজিদ স্মরণীর ১০৯ নং রোডের ‘মুক্তা হাউজ’র নিচ তলার একটি কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন ট্রাকচালক মোতালেব। 

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে তিনি তিনতলা ওই ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষে অবস্থান করেন। রাতে সেখানে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা ও মদ সেবন করে এবং মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের করণে সহযোগীরা কেউ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিকশাযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়। ঘটনার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া তন্বির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই কারার জন্য ঘটনাস্থলে আসি। সেখানে প্রাইভেট কার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। পরে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। যেখানে দেখা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোতালেব ও আরো দুইজন এ বাড়িতে আসে। মুক্তা হাউজের ওই কক্ষ থেকে আমরা মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করি। এখানে মেয়েদের নিয়ে আসা হতো। 

তিনি দাবি করেন, শনিবার রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিল এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ করেছে। তদের নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে গুলির ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি। এর সাথে আরো অনেকেই জড়িত আছে। জড়িতদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পারব। গুলিটি মাথার চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত।

মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, তন্বি নামের এক তরুণী এক মাস আগে নিচের ফ্লোরটি ভাড়া নেয়। সে নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করত। প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকত। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয়ে জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ প্রদান করি। কিন্তু, বাড়ির ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটেছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ বলেন, গুলিটি চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টারে তার মাথার স্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মোতালেব মিয়া এখন শঙ্কামুক্ত।

এদিকে, ছেলের ওপর গুলির ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যান মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম, তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও তিন বছরের কন্যা সন্তান। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় তার সাথে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয়। মোতালেব তাদেরকে জানায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের একজন কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। তার সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি। এরপর ডাক বাংলো মোড়ে স্যান্ডেল কেনার জন্য যাব। এ কথা বলে মোতালেব ফোন কেটে দেয়। রাতে আর কোনো কথা হয়নি তার সাথে। বেলা ১১টার দিকে একজন ফোন করে জানায়, তাকে গুলি করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন তারা। 

এনসিপির খুলনা মহানগর কমিটির সংগঠক আহম্মেদ হামীম রাহাত বলেন, সোনাডাঙ্গা এলাকায় মোতালেব সিকদারকে গুলি করা হয়েছে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো সন্ত্রাসী গ্রুপই আওয়ামী লীগ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী নেতাদের মদদেই সন্ত্রাসীরা খুলনাকে অশান্ত করার মিশনে নেমেছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সাথে যুক্ত হন।

ট্যাগঃ

শ্রমিক শক্তির নেতা মোতালেবকে গুলির নেপথ্যে কী, জানাল পুলিশ

সময়ঃ ১২:০৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধান মো. মোতালেব শিকদারকে গুলি করার নেপথ্যে নারী এবং মাদক-সংক্রান্ত বিরোধের তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে নেশাজাতীয় নানা সামগ্রী। ফলে, ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরেই তাকে গুলি করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। 

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মসজিদ স্মরণীর ১০৯ নং রোডের ‘মুক্তা হাউজ’র নিচ তলার একটি কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন ট্রাকচালক মোতালেব। 

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে তিনি তিনতলা ওই ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষে অবস্থান করেন। রাতে সেখানে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা ও মদ সেবন করে এবং মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের করণে সহযোগীরা কেউ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিকশাযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়। ঘটনার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া তন্বির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই কারার জন্য ঘটনাস্থলে আসি। সেখানে প্রাইভেট কার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। পরে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। যেখানে দেখা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোতালেব ও আরো দুইজন এ বাড়িতে আসে। মুক্তা হাউজের ওই কক্ষ থেকে আমরা মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করি। এখানে মেয়েদের নিয়ে আসা হতো। 

তিনি দাবি করেন, শনিবার রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিল এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ করেছে। তদের নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে গুলির ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি। এর সাথে আরো অনেকেই জড়িত আছে। জড়িতদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পারব। গুলিটি মাথার চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত।

মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, তন্বি নামের এক তরুণী এক মাস আগে নিচের ফ্লোরটি ভাড়া নেয়। সে নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করত। প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকত। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকালাপের বিষয়ে জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ প্রদান করি। কিন্তু, বাড়ির ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটেছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ বলেন, গুলিটি চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টারে তার মাথার স্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মোতালেব মিয়া এখন শঙ্কামুক্ত।

এদিকে, ছেলের ওপর গুলির ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যান মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম, তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও তিন বছরের কন্যা সন্তান। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় তার সাথে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয়। মোতালেব তাদেরকে জানায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের একজন কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। তার সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি। এরপর ডাক বাংলো মোড়ে স্যান্ডেল কেনার জন্য যাব। এ কথা বলে মোতালেব ফোন কেটে দেয়। রাতে আর কোনো কথা হয়নি তার সাথে। বেলা ১১টার দিকে একজন ফোন করে জানায়, তাকে গুলি করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন তারা। 

এনসিপির খুলনা মহানগর কমিটির সংগঠক আহম্মেদ হামীম রাহাত বলেন, সোনাডাঙ্গা এলাকায় মোতালেব সিকদারকে গুলি করা হয়েছে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো সন্ত্রাসী গ্রুপই আওয়ামী লীগ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী নেতাদের মদদেই সন্ত্রাসীরা খুলনাকে অশান্ত করার মিশনে নেমেছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সাথে যুক্ত হন।