১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাকসু নির্বাচনের মধ্যে ২৪ বিভাগে পরীক্ষা, তীব্র অসন্তোষ

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৫১ Time View

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। ৩৩ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর এ ঐতিহাসিক নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

তবে এর মধ্যেই প্রায় ২৪টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এছাড়া প্রার্থীদের অনেকেই ভাবছেন এ সময় নতুন করে পরীক্ষা শুরু হওয়া মানে শিক্ষার্থীদের জাকসুর আমেজ থেকে বঞ্চিত করা৷  

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য নিবিড় প্রস্তুতি, অন্যদিকে ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা- দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাদের মতে, পরীক্ষার চাপে তারা যেমন পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছেন না, তেমনি নির্বাচনী কার্যক্রমেও সক্রিয় থাকতে পারছেন না। এছাড়া পরীক্ষার ফরম পূরণসহ আনুষঙ্গিক কাজও তাদের জন্য বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি অনুষদের ২৪টি বিভাগে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আরো কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে পারে। এর মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাকসু নির্বাচনের দিনেও পাঁচটি বিভাগ ও অনুষদের চূড়ান্ত পরীক্ষা রয়েছে।

জাকসু নির্বাচন চলাকালে যেসব বিভাগে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ (৩য় বর্ষ), নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ (প্রথম বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও মাস্টার্স), ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (মাস্টার্স)৷ আইন অনুষদভুক্ত আইন ও বিচার বিভাগ (প্রথম বর্ষ)।

কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ (প্রথম বর্ষ), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ (প্রথম বর্ষ), নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগ (প্রথম বর্ষ ও মাস্টার্স), তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউট (চতুর্থ বর্ষ), জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ (প্রথম বর্ষ), দর্শন (প্রথম বর্ষ)৷ 

এছাড়াও গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদভুক্ত সিএসই বিভাগ (প্রথম ও তৃতীয় বর্ষ), পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ (দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও মাস্টার্স), রসায়ন (প্রথম বর্ষ ও মাস্টার্স), আইআইটি (মাস্টার্স), গণিত বিভাগ (প্রথম বর্ষ), পরিসংখ্যান বিভাগ (প্রথম বর্ষ)।

জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি বিভাগ (প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ), প্রাণ রসায়ন বিভাগ (প্রথম বর্ষ), প্রাণিবিদ্যা বিভাগ (দ্বিতীয় বর্ষ), বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (প্রথম বর্ষ), পাবলিক হেলথ (প্রথম বর্ষ)৷ ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ (প্রথম বর্ষ), মার্কেটিং (প্রথম বর্ষ), অ্যাকাউন্টিং (তৃতীয় বর্ষ)৷ 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়। এখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। তাই আমাদের দাবি, নির্বাচনের পর পরীক্ষার আয়োজন করা হোক।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কিন্তু নয় মাস আগে শেষ হওয়া সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি। এদিকে বিভাগের তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে।”

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু কোনো কারণ উল্লেখ না করে সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় রেখে শিক্ষার্থীদের একপ্রকার দুই মাস বসিয়ে রেখেছে। হঠাৎ করে জাকসু নির্বাচনের এই অস্থিতিশীল সময়ের মধ্যে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ খুবই অস্বস্তিকর। কেননা এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্বাবিদ্যালয় হওয়ায় নির্বাচনীয় আমেজ ও অস্থিতিশীল অবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রীক মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হবেন, যা পরীক্ষার ফলাফল সঠিক মূল্যায়নে ব্যহত হবে।”

তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ১ বছর পর তাদের চতুর্থ বর্ষের বিলম্বিত পরীক্ষা ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২৯ তারিখ থেকে যেহেতু অফিসিয়ালি জাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে, এক্ষেত্রে হলে অবস্থান করে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করা চ্যালেঞ্জিং হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জাকসু নির্বাচনের বেশ কয়েকজন প্রার্থী পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) জাবি শাখার আহ্বায়ক ও জাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে সব শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি উৎসবমুখর আমেজ দেখা দিয়েছে। তবে এর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি, কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে জাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ যেমন কিছুটা বাধার সম্মুখীন হবে, তেমনি অনেক শিক্ষার্থী প্রার্থী হিসেবে তার প্রচারণা চালাতে পারবে না। আমাদের দাবি, জাকসু নির্বাচনকালে যে বিভাগগুলোতে চূড়ান্ত পরীক্ষা চলবে, সেগুলো যেন কিছু সময় পেছানো হয়।”

জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক এবং জাকসু নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দিক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমরা তা চাই না। শিক্ষার্থীরা যদি সম্মিলিতভাবে পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন, তবে বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরও শিক্ষার্থীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে‌।”

গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও জাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “জাকসু নির্বাচনের সময় আগামী ১ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মাঝে অনেক বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকলে নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে। শুধু ভোটাররা নয়, বরং এদের পাশাপাশি অনেক প্রার্থী রয়েছেন যাদের ওই সময়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রার্থী হিসেবে তাদের প্রচারণাও ঠিকমতো হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “অনেক শিক্ষক কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে পোলিং অফিসারসহ বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত থাকবেন। এতে করে নির্বাচনী সংকট তৈরি হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ অংশগ্রহণ থাকবে না। এ বিষয়ে আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নির্বাচন চলাকালে পরীক্ষা না রাখার ব্যাপারে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান আহসান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি প্রশাসনিক সভায় আলোচনা করবো।”

১৯৯২ সালের পর দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর এবারই প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।

তবে পরীক্ষা ও নির্বাচনের সময় মুখোমুখি হওয়ায় নির্বাচনের আমেজে কিছুটা ভাটা ফেলেছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সমস্যা বিবেচনা করে একটি সমাধানের পথ বের করবে, যাতে তারা পরীক্ষা ও নির্বাচন-দুটি ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

ট্যাগঃ

জাকসু নির্বাচনের মধ্যে ২৪ বিভাগে পরীক্ষা, তীব্র অসন্তোষ

সময়ঃ ১২:০১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। ৩৩ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর এ ঐতিহাসিক নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

তবে এর মধ্যেই প্রায় ২৪টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এছাড়া প্রার্থীদের অনেকেই ভাবছেন এ সময় নতুন করে পরীক্ষা শুরু হওয়া মানে শিক্ষার্থীদের জাকসুর আমেজ থেকে বঞ্চিত করা৷  

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য নিবিড় প্রস্তুতি, অন্যদিকে ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা- দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাদের মতে, পরীক্ষার চাপে তারা যেমন পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছেন না, তেমনি নির্বাচনী কার্যক্রমেও সক্রিয় থাকতে পারছেন না। এছাড়া পরীক্ষার ফরম পূরণসহ আনুষঙ্গিক কাজও তাদের জন্য বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি অনুষদের ২৪টি বিভাগে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আরো কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে পারে। এর মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাকসু নির্বাচনের দিনেও পাঁচটি বিভাগ ও অনুষদের চূড়ান্ত পরীক্ষা রয়েছে।

জাকসু নির্বাচন চলাকালে যেসব বিভাগে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ (৩য় বর্ষ), নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ (প্রথম বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও মাস্টার্স), ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (মাস্টার্স)৷ আইন অনুষদভুক্ত আইন ও বিচার বিভাগ (প্রথম বর্ষ)।

কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ (প্রথম বর্ষ), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ (প্রথম বর্ষ), নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগ (প্রথম বর্ষ ও মাস্টার্স), তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউট (চতুর্থ বর্ষ), জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ (প্রথম বর্ষ), দর্শন (প্রথম বর্ষ)৷ 

এছাড়াও গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদভুক্ত সিএসই বিভাগ (প্রথম ও তৃতীয় বর্ষ), পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ (দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও মাস্টার্স), রসায়ন (প্রথম বর্ষ ও মাস্টার্স), আইআইটি (মাস্টার্স), গণিত বিভাগ (প্রথম বর্ষ), পরিসংখ্যান বিভাগ (প্রথম বর্ষ)।

জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি বিভাগ (প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ), প্রাণ রসায়ন বিভাগ (প্রথম বর্ষ), প্রাণিবিদ্যা বিভাগ (দ্বিতীয় বর্ষ), বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (প্রথম বর্ষ), পাবলিক হেলথ (প্রথম বর্ষ)৷ ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ (প্রথম বর্ষ), মার্কেটিং (প্রথম বর্ষ), অ্যাকাউন্টিং (তৃতীয় বর্ষ)৷ 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়। এখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। তাই আমাদের দাবি, নির্বাচনের পর পরীক্ষার আয়োজন করা হোক।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কিন্তু নয় মাস আগে শেষ হওয়া সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি। এদিকে বিভাগের তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে।”

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু কোনো কারণ উল্লেখ না করে সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় রেখে শিক্ষার্থীদের একপ্রকার দুই মাস বসিয়ে রেখেছে। হঠাৎ করে জাকসু নির্বাচনের এই অস্থিতিশীল সময়ের মধ্যে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ খুবই অস্বস্তিকর। কেননা এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্বাবিদ্যালয় হওয়ায় নির্বাচনীয় আমেজ ও অস্থিতিশীল অবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রীক মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হবেন, যা পরীক্ষার ফলাফল সঠিক মূল্যায়নে ব্যহত হবে।”

তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ১ বছর পর তাদের চতুর্থ বর্ষের বিলম্বিত পরীক্ষা ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২৯ তারিখ থেকে যেহেতু অফিসিয়ালি জাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে, এক্ষেত্রে হলে অবস্থান করে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করা চ্যালেঞ্জিং হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জাকসু নির্বাচনের বেশ কয়েকজন প্রার্থী পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) জাবি শাখার আহ্বায়ক ও জাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে সব শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি উৎসবমুখর আমেজ দেখা দিয়েছে। তবে এর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি, কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে জাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ যেমন কিছুটা বাধার সম্মুখীন হবে, তেমনি অনেক শিক্ষার্থী প্রার্থী হিসেবে তার প্রচারণা চালাতে পারবে না। আমাদের দাবি, জাকসু নির্বাচনকালে যে বিভাগগুলোতে চূড়ান্ত পরীক্ষা চলবে, সেগুলো যেন কিছু সময় পেছানো হয়।”

জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক এবং জাকসু নির্বাচনে জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দিক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমরা তা চাই না। শিক্ষার্থীরা যদি সম্মিলিতভাবে পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন, তবে বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরও শিক্ষার্থীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে‌।”

গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও জাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “জাকসু নির্বাচনের সময় আগামী ১ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মাঝে অনেক বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকলে নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে। শুধু ভোটাররা নয়, বরং এদের পাশাপাশি অনেক প্রার্থী রয়েছেন যাদের ওই সময়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রার্থী হিসেবে তাদের প্রচারণাও ঠিকমতো হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “অনেক শিক্ষক কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে পোলিং অফিসারসহ বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত থাকবেন। এতে করে নির্বাচনী সংকট তৈরি হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ অংশগ্রহণ থাকবে না। এ বিষয়ে আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নির্বাচন চলাকালে পরীক্ষা না রাখার ব্যাপারে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান আহসান বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি প্রশাসনিক সভায় আলোচনা করবো।”

১৯৯২ সালের পর দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর এবারই প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।

তবে পরীক্ষা ও নির্বাচনের সময় মুখোমুখি হওয়ায় নির্বাচনের আমেজে কিছুটা ভাটা ফেলেছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সমস্যা বিবেচনা করে একটি সমাধানের পথ বের করবে, যাতে তারা পরীক্ষা ও নির্বাচন-দুটি ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন।