লিখিত পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট সদস্য নির্বাচন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ও রাকসু নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না হওয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বিমুখ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে সংগঠনটি। এবার রাবি ক্যাম্পাস ছেড়ে উপাচার্য ড. সালেহ্ হাসান নকীব ও রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলামকে পাকিস্তানে যেতে বললেন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন। এই স্ট্যাটাসকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনাস-মালোচনার জন্ম দিয়েছে।
পোস্টে রাহী লিখেছেন, “ফকির-নকীব পাকিস্তান যাও, রাবি ছাড়ো, রাকসু বাঁচাও!”
তার পোস্টের প্রেক্ষিতে জাহিদ হাসান জোহা নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “কথায় কথায় যাকে-তাকে দেশের বাইরে পাঠানো ফ্যাদিবাদী আচরণ।” সালমান বিন আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন, “৫ আগস্টের পরে আপনাদের রাজনীতি হাসিনার মতোই হচ্ছে। জনগণের পারসেপশন বুঝতে আপনারা ব্যর্থ হচ্ছেন দিন দিন।”
হুজাইফা নামের একজন লিখেছেন, “শিক্ষকদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান অন্তত আশা করি এত বড় দলের কাছে। কথায় কথায় পাকিস্তান বলে নিজেদের লেজিটিমেসি নষ্ট কইরেন না।” বোরহান উদ্দিন লিখেছেন, “শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আমাদের সমালোচনা থাকবে অভিযোগ থাকবে। তাই বলে যা ইচ্ছে তাই বলা, তাদের ফকিন্নির বাচ্চা বলে গালি দেওয়া—এই বিষয়টা মনে হয় না কোনো ভদ্রলোকের কাজ হতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পাকিস্তানে পাঠানোর স্লোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “আমরা অতীতে দেখতাম ভারতীয় হাইকমিশন আগে সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করতো। ইনিও (ভিসি) দেখি পাকিস্তান হাইকমিশনার এলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, তারা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিতও হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে কীভাবে ষড়যন্ত্র করা যায়, কীভাবে কাকে বাদ দেওয়া যায়, রাকসুতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো আগ্রহ তাদের নেই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী, যারা রাকসু ফি প্রদান করেছে- এরকম হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ভোটদানে সুযোগ না দেওয়া মানে আমরা মনে করি গণতন্ত্রের উপর আঘাত। একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। আর বিশেষ গোষ্ঠী কারা, তা তো আপনারা জানেন। তাদের এসব কার্যকলাপের কারণেই মূলত রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে আমি ফেসবুকে ওই কথা লিখেছি।”
রাকসু নির্বাচনের আলাদা কমিশনার থাকা সত্ত্বেও কেনো বারবার উপাচার্যকেই দোষারোপ করছেন— এ প্রশ্নের উত্তরে রাহী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। একটি সংগঠনের কর্মী অন্যায় করলে যেমন নেতাকে দায়ভার নিতে হয়, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে নকীব স্যারকেও দায়ভার নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন কেউ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, অন্যায়ের শিকার না হয়, এগুলো নিশ্চিত করা তো তার দায়িত্ব।”
“তিনি সবকিছু ভঙ্গ করেছেন। আমরা তো তাকেই প্রশ্ন করব। রাকসুর এই পুনর্বিন্যস্ত ভোটের তারিখ প্রমাণ করে, তারা পাকিস্তানপন্থি। তারা কি জানতো না, এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা আছে। এমনিতেই তো রাকসু নির্বাচন নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। আমি দেখেছি, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি,” -যুক্ত করেন রাহী।
রাহী আরো বলেন, “প্রশাসন ধর্মকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নির্বাচনের এই তারিখটা দিয়েছে। হিন্দু শিক্ষার্থীরা কি তাদের ধর্মীয় উৎসব ছেড়ে এই ভোট দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে থাকবে? আমরা চাই সবাই মিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আগামী ১ বছর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা ছাত্রদের অধিকারের আওয়াজ উঠবে। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো প্রশাসন মেনে নিলেই তো আমরা আর প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাই না। কিন্তু তারা তা করছে না।”
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ১৩ দিন পিছিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে ওইদিন দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী হওয়ায় সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তা পরিবর্তন করে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে কমিশন।