০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় এশিয়ায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুঁজছেন মোদি

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৫:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৬৬ Time View

চীন, জাপান ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাপান যাচ্ছেন মোদি। চীনেও যাবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান শুল্ক আক্রমণের প্রভাব সামলাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।  

সাত বছরে প্রথমবারের মতো চীন সফর করবেন মোদি। তিনি আশা করছেন ট্রাম্পের পদক্ষেপ নতুন অংশীদারিত্বের জন্ম দেওয়ায় তার প্রধান উদ্যোগ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বিশেষ করে জাপান থেকে আরও সমর্থন পাবে।

পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি মোদির জাপান সফর প্রসঙ্গে বলেন,শুক্র ও শনিবার মোদীর জাপান সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ উভয় দেশ কোয়াড জোটের অংশ, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও আছে, যার লক্ষ্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে প্রতিহত করা।

নয়াদিল্লি বলছে তারা ট্রাম্পের ভারতের রপ্তানির ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছে।  তবে জাপানের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচক দুই দেশের শুল্ক চুক্তিতে জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপোড়েন থাকা সত্ত্বেও ভারত বলেছে,মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোটের কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবেন।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জাপানি কোম্পানিগুলো আগামী এক দশকে ভারতে সর্বোচ্চ ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে সুজুকি মোটর আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার

দুই দেশের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ খনিজে অংশীদারিত্ব এবং ভারতে জাপানি উচ্চমূল্যের উৎপাদনে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে  জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ধারণা করা হয় ভারত প্রচুর বিরল খনিজের মজুত রাখে, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সৌর প্যানেল পর্যন্ত সবকিছুতে ব্যবহৃত হয়, তবে দেশটির এগুলো ব্যাপকভাবে খনন ও প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি নেই।

এছাড়া দুই দিনের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্লক সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে অংশ নিতেরবিবার চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি। এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন প্রতিবেশী দেশ দুটি ২০২০ সালের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পর উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে মোদির।

চীন ও ভারত পাঁচ বছর পর সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় শুরু করতে চাচ্ছে এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সহজ করার বিষয়ে আলোচনা করছে। এর মধ্যে হিমালয়ের তিনটি সীমান্তপথে বাণিজ্য পুনরায় চালুর বিষয়ও রয়েছে।

ভারতও চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর বাড়তি নজরদারি আরোপকারী বিনিয়োগের নিয়ম শিথিল করার কথা বিবেচনা করছে, আর বেইজিং সম্প্রতি ভারতে সার, বিরল খনিজ এবং টানেল খনন যন্ত্রপাতি রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয়েছে।

নিউইয়র্কের সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক দেবাশীষ মিত্র বলেছেন, এই বৈঠকটি হচ্ছে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের ইচ্ছা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রটি চীনের ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নয়াদিল্লিকে কম শুল্ক নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় চাপ দেওয়ার হাতিয়ার দিতে পারে।

অন্যথায়,ভারত চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে এবং সম্ভবত বেইজিং-নেতৃত্বাধীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে যোগ দিতে পারে।’  

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের উত্তরপূর্ব এশিয়ার সিনিয়র বিশ্লেষক উইলিয়াম ইয়াং বলেছেন, ‘ট্রাম্প যে পরিস্থিতি ও আবহাওয়া তৈরি করেছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যদি ভারত ও চীন উভয়ই এটিকে পারস্পরিকভাবে লাভজনক চুক্তি হিসেবে দেখে।  

ট্যাগঃ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় এশিয়ায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক খুঁজছেন মোদি

সময়ঃ ১২:০৫:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

চীন, জাপান ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাপান যাচ্ছেন মোদি। চীনেও যাবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান শুল্ক আক্রমণের প্রভাব সামলাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।  

সাত বছরে প্রথমবারের মতো চীন সফর করবেন মোদি। তিনি আশা করছেন ট্রাম্পের পদক্ষেপ নতুন অংশীদারিত্বের জন্ম দেওয়ায় তার প্রধান উদ্যোগ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বিশেষ করে জাপান থেকে আরও সমর্থন পাবে।

পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি মোদির জাপান সফর প্রসঙ্গে বলেন,শুক্র ও শনিবার মোদীর জাপান সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ উভয় দেশ কোয়াড জোটের অংশ, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও আছে, যার লক্ষ্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে প্রতিহত করা।

নয়াদিল্লি বলছে তারা ট্রাম্পের ভারতের রপ্তানির ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছে।  তবে জাপানের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচক দুই দেশের শুল্ক চুক্তিতে জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপোড়েন থাকা সত্ত্বেও ভারত বলেছে,মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোটের কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবেন।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জাপানি কোম্পানিগুলো আগামী এক দশকে ভারতে সর্বোচ্চ ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে সুজুকি মোটর আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার

দুই দেশের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ খনিজে অংশীদারিত্ব এবং ভারতে জাপানি উচ্চমূল্যের উৎপাদনে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে  জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ধারণা করা হয় ভারত প্রচুর বিরল খনিজের মজুত রাখে, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সৌর প্যানেল পর্যন্ত সবকিছুতে ব্যবহৃত হয়, তবে দেশটির এগুলো ব্যাপকভাবে খনন ও প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি নেই।

এছাড়া দুই দিনের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্লক সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে অংশ নিতেরবিবার চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি। এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন প্রতিবেশী দেশ দুটি ২০২০ সালের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পর উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে মোদির।

চীন ও ভারত পাঁচ বছর পর সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় শুরু করতে চাচ্ছে এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা সহজ করার বিষয়ে আলোচনা করছে। এর মধ্যে হিমালয়ের তিনটি সীমান্তপথে বাণিজ্য পুনরায় চালুর বিষয়ও রয়েছে।

ভারতও চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর বাড়তি নজরদারি আরোপকারী বিনিয়োগের নিয়ম শিথিল করার কথা বিবেচনা করছে, আর বেইজিং সম্প্রতি ভারতে সার, বিরল খনিজ এবং টানেল খনন যন্ত্রপাতি রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয়েছে।

নিউইয়র্কের সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক দেবাশীষ মিত্র বলেছেন, এই বৈঠকটি হচ্ছে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের ইচ্ছা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রটি চীনের ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নয়াদিল্লিকে কম শুল্ক নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় চাপ দেওয়ার হাতিয়ার দিতে পারে।

অন্যথায়,ভারত চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে এবং সম্ভবত বেইজিং-নেতৃত্বাধীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে যোগ দিতে পারে।’  

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের উত্তরপূর্ব এশিয়ার সিনিয়র বিশ্লেষক উইলিয়াম ইয়াং বলেছেন, ‘ট্রাম্প যে পরিস্থিতি ও আবহাওয়া তৈরি করেছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যদি ভারত ও চীন উভয়ই এটিকে পারস্পরিকভাবে লাভজনক চুক্তি হিসেবে দেখে।