অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, লেজুড়বৃত্তি ও স্বজনপ্রীতির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
এমনই অভিযোগ তুলে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জুলাই শহীদদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য-২৪’ এর সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। ফারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
অনন্যা ফারিয়ার দাবি, শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করা হয়নি। এ কারণে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অনন্যা ফারিয়া বলেন, “জাকসুতে প্রতিনিধিত্বের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—কোনো শিক্ষার্থীর অধিকার যাতে ক্ষুণ্ন না হয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কোনো প্যানেল থেকে অংশ নিলে নিজের নৈতিকতার জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যেত। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমার উপলব্ধি হয়েছে, নতুন দিনের রাজনীতি হতে হবে লেজুড়বৃত্তি ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার জন্য নিবেদিত।”
তিনি বলেন, “আমি প্রথমে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু যে প্যানেল শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারছে না, বরং ‘কে কার ম্যান’ এই গ্রুপিংয়ের মধ্যে ব্যস্ত, সেখানে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। তাই নৈতিকতার জায়গা থেকে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থিতা বেছে নিয়েছি।”
অন্যন্যা ফারিয়া জানান, তাকে ছাত্রদল থেকে জিএস ও এজিএস পদে মনোনয়ন ফরম তুলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসভিত্তিক গ্রুপিংয়ের কারণে প্যানেল শিক্ষার্থীবান্ধব হতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর ও জুলাইয়ের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, সংঘবদ্ধ প্রতারণা ও দলকে জিম্মি করার বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করছি। তাই আসন্ন জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে স্বতন্ত্র দাঁড়াচ্ছি।”
ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ফারিয়া পোস্টে উল্লেখ করেন, “আমি ভেবেছিলাম, যে দল একাত্তর ও চব্বিশের চেতনাকে ধারণ করে, তারা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতিতে এসে সিন্ডিকেট ও লেজুড়বৃত্তির কাছে হার মানবে না। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগঠনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। যে প্যানেলের সূচনাই প্রতারণার রাজনীতি দিয়ে, ভোট দেওয়ার আগে ক্যাম্পাসের সবার জানা উচিত।”
তিনি আরো বলেন, “চব্বিশের রিফর্মেশন রাজনীতি পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু মেধার মূল্যায়ন ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনা উপেক্ষা করা হচ্ছে। তারেক রহমান ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ বললেও বাস্তবে ছাত্রদলের ভেতরে সিন্ডিকেট সেই জনমতকে পায়ে পিষে ফেলেছে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “জাকসুতে নির্বাচিত হলে কোনো শিক্ষার্থী যেন কোনো গোষ্ঠীর খেলার গুটি না হয় এবং কোনো সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করতে বাধ্য না হয়, সে বিষয়ে কাজ করব। আমরা যে কাঁচ ভেঙেছি জুলাইয়ে, সেই চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”