০১:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘অনিশ্চয়তা কাটিয়ে’ প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল, সুশীল কার্কির শপথ

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৯:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৪২ Time View

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা কাটিয়ে নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নেপালের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল স্থানীয় সময় রাতে সাড়ে ৮টার দিকে সুশীলা কার্কিকে শপথ পড়ান। নেপালের সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি শপথ গ্রহণ করেন।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কির শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে কয়েক দিনের জল্পনা-কল্পনা ও আড়ালের রাজনৈতিক আলোচনার অবসান ঘটিয়ে নেপালে প্রথমবারের মতো একজন নারী সরকারপ্রধানের পদে বসলেন। তার দায়িত্ব গ্রহণে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা কাটিয়ে নতুন দিশা পেল তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষার দেশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, শপথ গ্রহণের পরপর সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নেপালে সাধারণ নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের অধীনে যাবে দেশটি।

রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রামসহায় যাদব এবং প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাওয়াত শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জানিয়েছে এনডিটিভি।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল, নেপাল সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল এবং জেনারেশন জেড (জেন-জি) আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুশীলা কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নেপালের জেন-জিদের আন্দোলনে সহিংসতা ও সরকারি বাহিনীর গুলিতে রক্তক্ষয়ী প্রাণহানির ঘটনায় দেশীয় এবং বৈশ্বিক চাপের মুখে ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন। সেই থেকে প্রায় চার দিন সরকার ও সরকারপ্রধান ছাড়া চলেছে নেপাল। শুক্রবার সেই রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হলো। 

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ বন্ধের প্রতিবাদে  নেপালের তরুণ-কিশোররা রাস্তায় নামলেও তাতে যুক্ত হয় দুর্নীতি ও বেকারত্বে ক্ষুব্ধ জনতা। এই বিক্ষোভ দমনে পুলিশের অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হন এবং এরপরই পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না ওলির জন্য। কারণ, হতাহতের ঘটনায় আগুন জ্বলে ওঠে নেপালের সরকারি ভবন ও এমনকি সরকারঘনিষ্ট বেসরকারি স্থাপনাতেও।

যদিও কয়েক দিন ধরে কার্কির নাম সম্ভাব্য ঐকমত্য প্রার্থী হিসেবে ঘুরছিল, তবে তিনিই একমাত্র বিকল্প ছিলেন না। একপর্যায়ে খবর আসে, বিক্ষোভকারীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের একাংশ সমর্থন জানাচ্ছিলেন কুলমান ঘিসিংকে, যিনি নেপালের দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

আরেকটি আলোচিত নাম ছিল বালেন্দ্র শাহ বা ‘বলেন’। ৩৫ বছর বয়সি কাঠমান্ডুর এই মেয়র, র‌্যাপার ও রাজনীতিবিদ, যিনি শহুরে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা কার্কিকে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আপসহীন ব্যক্তি হিসেবে দেখেন। বিচারপতি থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

তবে তার বিচার বিভাগীয় ক্যারিয়ার ছিল অশান্ত। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনে তৎকালীন সরকার, যা অনেকের কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছিল। জনমতের চাপের মুখে সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। তবে এ ঘটনায় কার্কি হতাশ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন। আর সেই কার্কিই হলেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

ট্যাগঃ

‘অনিশ্চয়তা কাটিয়ে’ প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল, সুশীল কার্কির শপথ

সময়ঃ ১২:০৯:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা কাটিয়ে নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নেপালের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল স্থানীয় সময় রাতে সাড়ে ৮টার দিকে সুশীলা কার্কিকে শপথ পড়ান। নেপালের সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি শপথ গ্রহণ করেন।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কির শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে কয়েক দিনের জল্পনা-কল্পনা ও আড়ালের রাজনৈতিক আলোচনার অবসান ঘটিয়ে নেপালে প্রথমবারের মতো একজন নারী সরকারপ্রধানের পদে বসলেন। তার দায়িত্ব গ্রহণে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শূন্যতা কাটিয়ে নতুন দিশা পেল তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষার দেশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, শপথ গ্রহণের পরপর সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নেপালে সাধারণ নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের অধীনে যাবে দেশটি।

রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রামসহায় যাদব এবং প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাওয়াত শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জানিয়েছে এনডিটিভি।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল, নেপাল সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল এবং জেনারেশন জেড (জেন-জি) আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুশীলা কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নেপালের জেন-জিদের আন্দোলনে সহিংসতা ও সরকারি বাহিনীর গুলিতে রক্তক্ষয়ী প্রাণহানির ঘটনায় দেশীয় এবং বৈশ্বিক চাপের মুখে ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন। সেই থেকে প্রায় চার দিন সরকার ও সরকারপ্রধান ছাড়া চলেছে নেপাল। শুক্রবার সেই রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হলো। 

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ বন্ধের প্রতিবাদে  নেপালের তরুণ-কিশোররা রাস্তায় নামলেও তাতে যুক্ত হয় দুর্নীতি ও বেকারত্বে ক্ষুব্ধ জনতা। এই বিক্ষোভ দমনে পুলিশের অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হন এবং এরপরই পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না ওলির জন্য। কারণ, হতাহতের ঘটনায় আগুন জ্বলে ওঠে নেপালের সরকারি ভবন ও এমনকি সরকারঘনিষ্ট বেসরকারি স্থাপনাতেও।

যদিও কয়েক দিন ধরে কার্কির নাম সম্ভাব্য ঐকমত্য প্রার্থী হিসেবে ঘুরছিল, তবে তিনিই একমাত্র বিকল্প ছিলেন না। একপর্যায়ে খবর আসে, বিক্ষোভকারীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের একাংশ সমর্থন জানাচ্ছিলেন কুলমান ঘিসিংকে, যিনি নেপালের দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

আরেকটি আলোচিত নাম ছিল বালেন্দ্র শাহ বা ‘বলেন’। ৩৫ বছর বয়সি কাঠমান্ডুর এই মেয়র, র‌্যাপার ও রাজনীতিবিদ, যিনি শহুরে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা কার্কিকে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আপসহীন ব্যক্তি হিসেবে দেখেন। বিচারপতি থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

তবে তার বিচার বিভাগীয় ক্যারিয়ার ছিল অশান্ত। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনে তৎকালীন সরকার, যা অনেকের কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়েছিল। জনমতের চাপের মুখে সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। তবে এ ঘটনায় কার্কি হতাশ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন। আর সেই কার্কিই হলেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী।