জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে র্যাগিং করার দায়ে অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রায় ১ মাস পর এবং অভিযোগ পুনর্বহালের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রক্টর অফিস থেকে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
র্যাগিংয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেখানে পূর্বের পাঁচজনের সঙ্গে নতুন করে চারুকলা বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পর্ণা সাহার নাম উঠে আসে। পরবর্তীতে তাকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।
তবে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর অভিযুক্ত পর্ণা সাহা ঘটনা অস্বীকার করার পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের ‘আরো র্যাগিং করা দরকার’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী পর্ণা সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যেখানে র্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেইনি, সেখানে আমাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে র্যাগিংয়ের দায় দেওয়া হয়েছে। আমি চাই তাদের (জুনিয়রদের) র্যাগিং আরো হোক। তাদের বেশি করে র্যাগিং দেওয়া দরকার।”
ভুক্তভোগী চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৫৩ ব্যাচ) শিক্ষার্থী প্রান্ত রায় বলেন, “পর্ণা আপু (পর্ণা সাহা) এর আগেও আমাদের বলেছেন, ‘তোরা র্যাগিংয়ের কী দেখেছিস! তোদের ভালোভাবে র্যাগিং দিলে বুঝতে পারতিস। আমরা যা পেয়েছি, তোদের তার সিকি পরিমাণও দেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ছয় শিক্ষার্থীকে শোকজ করেছে তারা হলেন- ৪৯তম ব্যাচের ঐশী সরকার অথি, ৪৯তম ব্যাচের পর্ণা সাহা, ৫০তম ব্যাচের প্রমা রাহা এবং ৫১তম ব্যাচের নোমান, আরিয়ান ও সেজান। অভিযুক্তদের মধ্যে ঐশী সরকার অথি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং প্রমা রাহা একই হল সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে রয়েছেন।
গত ২৭ আগস্ট চারুকলা বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলাকালে বিভাগের গ্যালারিতে এই র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এর আগে অনুষদের ডিন অফিসের এক কর্মচারীর সঙ্গে ৫৩তম ব্যাচের দুই ছাত্রীর কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন।
প্রান্ত রায়ের অভিযোগ অনুযায়ী, পরীক্ষা চলাকালে ৫১ ব্যাচের নোমান ও আরিয়ান তাকে ও তার সহপাঠীদের জোর করে জয়নুল গ্যালারিতে নিয়ে যান। সেখানে ৪৯ ব্যাচের ঐশী সরকার অথি প্রান্তের চেহারা নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন, “ওর মুখটাই এমন, ও জন্ম থেকেই এমন, এমনই জন্মাইছে।”
অন্যদিকে ৫১ ব্যাচের সেজান তাকে “লাথি মেরে ডিপার্টমেন্ট থেকে বের করে দেব” বলে হুমকি দেন। এ ঘটনায় পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রান্ত রায় গত ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের পর চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীম রেজা এবং বিভাগের আরো দুই শিক্ষক (অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দিন ও সহযোগী অধ্যাপক ধীমান সরকার) বিষয়টি বিভাগীয়ভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেন।
বিভাগীয় সমাধানের আশ্বাস পেয়ে প্রান্ত রায় প্রক্টর অফিস থেকে তার অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহারের ২০ দিন এবং ঘটনার প্রায় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা বা সমাধান না হওয়ায়, প্রান্ত রায় গত ১৫ অক্টোবর প্রক্টর বরাবর তার অভিযোগটি পুনরায় বহাল রাখার আবেদন করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত ছয়জনকে শোকজ নোটিশ পাঠায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, “র্যাগিংয়ের মতো ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি-র্যাগিং নীতিমালা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
Voice24 Admin 













