০২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের প্রস্থানে এপেক সম্মেলনের স্পটলাইটে শি জিনপিং

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:০৩:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৫৪ Time View

ওয়াশিংটন-বেইজিং আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান থেকে নিজ দেশে ফেরার পরপরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রওনা হন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের দিকে। এই দৃশ্য যেন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্বের রূপান্তরের প্রতীক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে রক্ষণশীলনীতির পথে, আর চীন এগিয়ে আসছে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের নতুন মুখপাত্র হয়ে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

এ বছর এপেক সম্মেলনে ট্রাম্প অনুপস্থিত থাকলেও, চীনের শি জিনপিং উপস্থিত থেকে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হন। ট্রাম্পের প্রতিনিধিত্ব করেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে শি বলেন, আমাদের সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতায় বিশ্বাস রাখতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-কেন্দ্রিক ব্যবস্থার কর্তৃত্ব ও কার্যকারিতা জোরদার করতে হবে।

শি আরও আহ্বান জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিয়মসমূহ সময়োপযোগীভাবে হালনাগাদ করতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত হয়।

তবে এশিয়ার অনেক দেশ চীনের বক্তব্যে সতর্ক। তারা মনে করে, বাণিজ্যে চীনের আধিপত্য, রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শন সবকিছুই তার মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে গঠিত এপেক ফোরাম থেকে এবার কার্যত সরে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্প। তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কবিধিনিষেধ ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ওপর জোর দিচ্ছে। ফলে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এখন আরও জটিল হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তা কেসি ম্যাস বলেন, আমাদের উপস্থিতি এই সম্মেলনে খুবই শক্তিশালী ও সক্রিয়। কেবল সময়সূচি মিলেনি বলে প্রেসিডেন্ট সব ইভেন্টে থাকতে পারেননি। একই দিন ওয়াশিংটনে ফেরা ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বাৎসরিক হ্যালোইন পার্টিতে যোগ দেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তার সুযোগ নিচ্ছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতে পড়েও চীন এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রভাব বাড়াতে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করেছে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং একটি উন্নত চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেন। স্টিমসন সেন্টারের গবেষক ইউন সান বলেন, এই হালনাগাদ চুক্তি প্রমাণ করে, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় চীনই এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি। তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো অনেক বেশি সীমিত ও পরিস্থিতিনির্ভর।

চীনের এই সক্রিয় উপস্থিতি মার্কিন নীতির সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছে। শি জিনপিং সম্মেলনের ফাঁকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি ও জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। তবে এই বৈঠকগুলো সহজ হবে না, কারণ চীনের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য বিরোধ ও জাপানের কট্টর অবস্থান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

অন্যদিকে, চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্য নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। সস্তা পণ্যে বৈশ্বিক বাজার প্লাবিত করার অভিযোগে বেইজিং সমালোচিত। এ মাসে চীন বিরল খনিজ রফতানিতে নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপের ঘোষণা দেয়, যা সাপ্লাই চেইনে নতুন ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তোশিহিরো কিতামুরা বলেন, চীন মুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়, কিন্তু বাস্তবে তারা নিজেদের সম্পদকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করছে।

চায়না গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের এরিক ওল্যান্ডার বলেন, বাণিজ্য, অবকাঠামো ও সাপ্লাই চেইন জোরদারের মাধ্যমে চীনের লক্ষ্য হচ্ছে পুরো অঞ্চলকে এমনভাবে নিজের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করা, যাতে অন্য কোনও দেশ সহজে এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে।

এপেক সম্মেলনে কোনও বড় নীতিগত অগ্রগতি না হলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের অনুপস্থিতি এবং শি জিনপিংয়ের সক্রিয় কূটনীতি আঞ্চলিক নেতৃত্বে চীনের অগ্রগতি ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাদপসরণের প্রতীকী রূপ নিয়েছে।

ট্যাগঃ

ট্রাম্পের প্রস্থানে এপেক সম্মেলনের স্পটলাইটে শি জিনপিং

সময়ঃ ১২:০৩:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

ওয়াশিংটন-বেইজিং আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান থেকে নিজ দেশে ফেরার পরপরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রওনা হন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের দিকে। এই দৃশ্য যেন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্বের রূপান্তরের প্রতীক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাচ্ছে রক্ষণশীলনীতির পথে, আর চীন এগিয়ে আসছে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের নতুন মুখপাত্র হয়ে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

এ বছর এপেক সম্মেলনে ট্রাম্প অনুপস্থিত থাকলেও, চীনের শি জিনপিং উপস্থিত থেকে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হন। ট্রাম্পের প্রতিনিধিত্ব করেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে শি বলেন, আমাদের সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতায় বিশ্বাস রাখতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-কেন্দ্রিক ব্যবস্থার কর্তৃত্ব ও কার্যকারিতা জোরদার করতে হবে।

শি আরও আহ্বান জানিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিয়মসমূহ সময়োপযোগীভাবে হালনাগাদ করতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত হয়।

তবে এশিয়ার অনেক দেশ চীনের বক্তব্যে সতর্ক। তারা মনে করে, বাণিজ্যে চীনের আধিপত্য, রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শন সবকিছুই তার মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে গঠিত এপেক ফোরাম থেকে এবার কার্যত সরে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্প। তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কবিধিনিষেধ ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ওপর জোর দিচ্ছে। ফলে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এখন আরও জটিল হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তা কেসি ম্যাস বলেন, আমাদের উপস্থিতি এই সম্মেলনে খুবই শক্তিশালী ও সক্রিয়। কেবল সময়সূচি মিলেনি বলে প্রেসিডেন্ট সব ইভেন্টে থাকতে পারেননি। একই দিন ওয়াশিংটনে ফেরা ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বাৎসরিক হ্যালোইন পার্টিতে যোগ দেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তার সুযোগ নিচ্ছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতে পড়েও চীন এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রভাব বাড়াতে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করেছে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং একটি উন্নত চীন-আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেন। স্টিমসন সেন্টারের গবেষক ইউন সান বলেন, এই হালনাগাদ চুক্তি প্রমাণ করে, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় চীনই এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি। তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো অনেক বেশি সীমিত ও পরিস্থিতিনির্ভর।

চীনের এই সক্রিয় উপস্থিতি মার্কিন নীতির সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছে। শি জিনপিং সম্মেলনের ফাঁকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি ও জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। তবে এই বৈঠকগুলো সহজ হবে না, কারণ চীনের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য বিরোধ ও জাপানের কট্টর অবস্থান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

অন্যদিকে, চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্য নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। সস্তা পণ্যে বৈশ্বিক বাজার প্লাবিত করার অভিযোগে বেইজিং সমালোচিত। এ মাসে চীন বিরল খনিজ রফতানিতে নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপের ঘোষণা দেয়, যা সাপ্লাই চেইনে নতুন ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তোশিহিরো কিতামুরা বলেন, চীন মুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়, কিন্তু বাস্তবে তারা নিজেদের সম্পদকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করছে।

চায়না গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের এরিক ওল্যান্ডার বলেন, বাণিজ্য, অবকাঠামো ও সাপ্লাই চেইন জোরদারের মাধ্যমে চীনের লক্ষ্য হচ্ছে পুরো অঞ্চলকে এমনভাবে নিজের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করা, যাতে অন্য কোনও দেশ সহজে এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে।

এপেক সম্মেলনে কোনও বড় নীতিগত অগ্রগতি না হলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের অনুপস্থিতি এবং শি জিনপিংয়ের সক্রিয় কূটনীতি আঞ্চলিক নেতৃত্বে চীনের অগ্রগতি ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাদপসরণের প্রতীকী রূপ নিয়েছে।