এই পথপরিক্রমার মধ্য দিয়েই লেখক সেই দুঃসময়ের মানুষের প্রাথমিক বিহ্বলতা এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ‘নৃশংসতা ও নির্মমতার’ প্রত্যক্ষ ভাষ্যচিত্র তুলে ধরেছেন। অধ্যাপক রায়হানের মতো চরিত্রের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তের সংকটাপন্ন, দোদুল্যমান চেতনালোক এবং আহত হাসানের মতো চরিত্রের মাধ্যমে প্রতিরোধের প্রাথমিক স্ফুলিঙ্গ ফুটিয়ে তুলেছেন।
উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি কেবল ব্যক্তিগত পলায়ন নয়, বরং স্বাধীনতার দিকে একটি জাতির ঐতিহাসিক যাত্রার প্রত্যয়। এটি যুদ্ধের প্রারম্ভিক আঘাত ও প্রত্যাঘাতের সলতে পাকানোর প্রহরগুলো উন্মোচন করেছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালের বিরুদ্ধ পরিবেশে সংগ্রামী ঘটনাপ্রবাহের পুনরুচ্চারণের সাহসিকতা দেখিয়েছে। চরম অনিশ্চয়তা ও অবরুদ্ধতার মধ্যেও বিজয়ের সুপ্ত স্বপ্নটি তিনি অঙ্কন করেছেন তাঁর নির্মিত চরিত্রের মাধ্যমে, ‘জখম শরীর, এক হাতে রাইফেল, জানালা দিয়ে দেখতে পায় নদীর ওপারে, দিগন্তরেখার কাছে তখনো তুমুল গুলি হচ্ছে, গ্রাম জ্বলছে, হাট জ্বলছে, খামারবাড়ি জ্বলে যাচ্ছে। দুজনেই দেখতে পায় লেলিহান শিখা, ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং আত্মচিৎকারময় আকাশের ওপারে সূর্যোদয় হচ্ছে।’ এভাবেই ‘যাত্রা’ উপন্যাসে নতুন সূর্যের উদয়ের প্রতীক দিয়ে স্বাধীনতার দিকে এক ঐতিহাসিক যাত্রার মানসিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
Voice24 Admin 





