১০:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: বিমান উড়ে মন পুড়ে

  • Voice24 Admin
  • সময়ঃ ১২:১৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৬৫ Time View
মাইলস্টোনের স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ওপর দিয়ে প্লেন গিলেই আতঙ্ক কাজ করছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ও অভিভাবকদের। বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বভাবিক হচ্ছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিবেশ।

১৬ দিন পর স্বাভাবিক গতিতে ক্লাস শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

প্রথম কয়েক দিন ক্যাম্পাসে মূলত চলেছিল দোয়া মাহফিল ও কাউন্সেলিং। বুধবার (৬ আগস্ট) থেকে ধাপে ধাপে শুরু হচ্ছে ক্লাস। ক্লাসের পাশাপাশি আগামী তিন মাস মনোসামাজিক কাউন্সেলিং চলবে। শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এখন সবার মূল লক্ষ্য।

মাইলস্টোন দ্বাদশ শ্রেণির চন্দ্র মিকা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জানালা থেকে দেখা যায়, তারপর বিমানের শব্দ শুনলেই মনের ভেতরে একটা আতঙ্ক কাজ করছে এখনো। আমরা ক্লাসে ফিরে আসছি কারণ আমাদের সিলেবাস বড় সামনে পরীক্ষা, সিলেবাস শেষ করতে হবে। আমাদের অনেক ছোট ভাই বোন আহত ও নিহত হয়েছে তাদের এ ঘটনাগুলো আমরা কোনভাবেই ভুলতে পারছি না।

অভিভাবক মহুয়া ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে এ কলেজে। আমার মেয়ের মনে আতঙ্ক ভয়-ভীতি কাজ করছে এখনো।  অনেক সময় বলছে আম্মু আমাদের কলেজের ওপর দিয়ে প্লেন গেলে শব্দ শুনলে আমাদের ভয় কাজ করে। তার জন্য পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারছি না।  

তিনি আরও বলেন, আমি গার্ডিয়ান হিসেবে এতটুকু বলতে চাই একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে এবং বড় ধরনের একটা ক্ষতি হয়ে গেছে বাচ্চাদের তবে এটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। আমরাও চেষ্টা করছি শিক্ষকরাও চেষ্টা করছেন, আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

মাইলস্টোন কলেজের পরিচালক (একাডেমিক) কাজী বিলকিস আরা আইরিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাচ্চাদের নিয়ে যেটা ভাবছি, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, ব্রাক ও অন্যান্য অনেক সংগঠন আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। আমাদের কয়েকজন শিক্ষককে ছুটি দিতে হয়েছে, তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিক্ষকরা যদি ঠিক না থাকেন তাহলে তারা ছাত্রদের কীভাবে শিক্ষা দেবেন। যদি কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষক ছুটি চান এখন তাকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ছাত্রদের বলছি তোমরা খোঁজ নাও তোমাদের সহপাঠী কে কোথায় অসুস্থ আছে, তোমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করো, আমরাও বোঝানোর চেষ্টা করছি, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আমরা এ বিপর্যয় থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ধাপে ধাপে ক্যাম্পাসে ফেরানো হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের মানসিক ক্ষতি তুলনামূলক বেশি। তাই তাদের জন্য আলাদা মনোযোগ দিয়ে সেশন পরিচালনা করা হবে।  

প্রসঙ্গত, ব্র্যাক, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কলেজের নিজস্ব সাইকোলজিস্টদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলিং টিম কাজ করছে। শুরুতে ওয়ান-টু-ওয়ান সেশন হলেও এখন চলছে গ্রুপ কাউন্সেলিং। গত ২১ জুলাই প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় এ প্রতিষ্ঠানটির ৩৩ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ১৩ দিন ছুটি ঘোষণা করে।

জিএমএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ট্যাগঃ

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: বিমান উড়ে মন পুড়ে

সময়ঃ ১২:১৮:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
মাইলস্টোনের স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ওপর দিয়ে প্লেন গিলেই আতঙ্ক কাজ করছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ও অভিভাবকদের। বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বভাবিক হচ্ছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিবেশ।

১৬ দিন পর স্বাভাবিক গতিতে ক্লাস শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

প্রথম কয়েক দিন ক্যাম্পাসে মূলত চলেছিল দোয়া মাহফিল ও কাউন্সেলিং। বুধবার (৬ আগস্ট) থেকে ধাপে ধাপে শুরু হচ্ছে ক্লাস। ক্লাসের পাশাপাশি আগামী তিন মাস মনোসামাজিক কাউন্সেলিং চলবে। শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এখন সবার মূল লক্ষ্য।

মাইলস্টোন দ্বাদশ শ্রেণির চন্দ্র মিকা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জানালা থেকে দেখা যায়, তারপর বিমানের শব্দ শুনলেই মনের ভেতরে একটা আতঙ্ক কাজ করছে এখনো। আমরা ক্লাসে ফিরে আসছি কারণ আমাদের সিলেবাস বড় সামনে পরীক্ষা, সিলেবাস শেষ করতে হবে। আমাদের অনেক ছোট ভাই বোন আহত ও নিহত হয়েছে তাদের এ ঘটনাগুলো আমরা কোনভাবেই ভুলতে পারছি না।

অভিভাবক মহুয়া ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে এ কলেজে। আমার মেয়ের মনে আতঙ্ক ভয়-ভীতি কাজ করছে এখনো।  অনেক সময় বলছে আম্মু আমাদের কলেজের ওপর দিয়ে প্লেন গেলে শব্দ শুনলে আমাদের ভয় কাজ করে। তার জন্য পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারছি না।  

তিনি আরও বলেন, আমি গার্ডিয়ান হিসেবে এতটুকু বলতে চাই একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে এবং বড় ধরনের একটা ক্ষতি হয়ে গেছে বাচ্চাদের তবে এটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে। আমরাও চেষ্টা করছি শিক্ষকরাও চেষ্টা করছেন, আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

মাইলস্টোন কলেজের পরিচালক (একাডেমিক) কাজী বিলকিস আরা আইরিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাচ্চাদের নিয়ে যেটা ভাবছি, তার চেয়ে বেশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, ব্রাক ও অন্যান্য অনেক সংগঠন আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। আমাদের কয়েকজন শিক্ষককে ছুটি দিতে হয়েছে, তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিক্ষকরা যদি ঠিক না থাকেন তাহলে তারা ছাত্রদের কীভাবে শিক্ষা দেবেন। যদি কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষক ছুটি চান এখন তাকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ছাত্রদের বলছি তোমরা খোঁজ নাও তোমাদের সহপাঠী কে কোথায় অসুস্থ আছে, তোমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করো, আমরাও বোঝানোর চেষ্টা করছি, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আমরা এ বিপর্যয় থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ধাপে ধাপে ক্যাম্পাসে ফেরানো হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের মানসিক ক্ষতি তুলনামূলক বেশি। তাই তাদের জন্য আলাদা মনোযোগ দিয়ে সেশন পরিচালনা করা হবে।  

প্রসঙ্গত, ব্র্যাক, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কলেজের নিজস্ব সাইকোলজিস্টদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলিং টিম কাজ করছে। শুরুতে ওয়ান-টু-ওয়ান সেশন হলেও এখন চলছে গ্রুপ কাউন্সেলিং। গত ২১ জুলাই প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় এ প্রতিষ্ঠানটির ৩৩ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ১৩ দিন ছুটি ঘোষণা করে।

জিএমএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।