ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উত্তর নারায়ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতেই বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সকালে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা কয়েকজন অতিথির সাথে কথা বলছিলেন। এজন্য ক্লাসে যেতে তার কিছুটা দেরি হয়। এ নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল লতিফকে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ জানালে অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার পরই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় সুশীল সমাজ অভিযুক্ত সোহেল রানাকে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা ১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, শিক্ষার্থীদের মারধর, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত তিনি একাধিক শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছেন। রাজনৈতিক প্রভাবে কারণে তাকে কেউ কিছু বলতে পারেনি।
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিশাত বলেন, “গতকাল লতিফ স্যারের ক্লাস ছিল না। কিন্তু রানা স্যার লতিফ স্যারকে বকাঝকা করেন। এক পর্যায়ে সোহেল রানা স্যার লতিফ স্যারকে চড় মারেন এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেন।”
সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, “একটা প্রোগ্রামের কারণে সব শিক্ষকরা মিলে কিছু কাজ করছিলাম। সে সময় সব শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সোহেল রানা খারাপ ভাষায় কথা বলেন। তখন আমি তাকে খারাপ ভাষায় কথা বলতে নিষেধ করি। এজন্য তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে চড় মারেন এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, “শিক্ষকরা ক্লাসে না গিয়ে অন্য কাজ করছিল। ক্লাসের ২৫ মিনিট সময় পার হয়ে গেলেও তারা ক্লাসে না গিয়ে গল্প করছিল। এ সময় আমি শিক্ষকদের ক্লাসে যেতে বলি। কিন্তু লতিফ স্যার আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলেন। তখন আমি লতিফ স্যারকে বলি আপনি এমনভাবে কথা বলছেন কেন। তখন তিনি আমার দিকে আরো উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এলে আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়। মারধর বা কোন লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেনি।”
তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং সব শিক্ষকরা মিলে মিটিং হসেছে। সেই মিটিংয়ে আমি লতিফ স্যারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। এরপর আমার টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের বিরিয়ানীও খেতে দিয়েছি। কারো মাঝে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আজ তৃতীয় পক্ষ ষড়যন্ত্র করে শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ বলেন, “সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বিগত সময়েও শিক্ষকদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে। সোমবার সকালে সব ক্লাস শেষে শিক্ষকরা মিলে একটা প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বলছিলাম। এ সময় সোহেল রানা শিক্ষকদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। সে সময় সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ প্রতিবাদ করলে তার উপর চড়াও হয়। তার মুখে চড় মারে এবং লাথি মেরে ফেলে দেয়।”
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আরশাদ আলী বলেন, “বিদ্যালয়ের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন দিলে আমি স্কুলে আসি। আব্দুল লতিফ এবং সোহেল রানার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারি। বিস্তারিত জানার পর সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরিভাবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একটা মিটিং ডাকা হয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত মিটিং থেকেই নেওয়া হবে।”